২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
প্রকাশিত:সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫ ১২:০৬
মো: আলী হোসেন খান, জগন্নাথপুর
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্যামল গোপ ও জগন্নাথপুর বাজারের সহ সেক্রেটারি লিটন মিয়ার মধ্যে পাল্টাপাল্টি সাংবাদিক সম্মেলন নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জগন্নাথপুরে ব্যবসায়ীর কাছে জমিয়ত ও জামাত নেতার চাঁদা দাবীর প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন করেন ঝলক ফ্যাশনের মালিক শ্যামল গোপ।
১৪ জুন শনিবার বিকালে জগন্নাথপুর সদর বাজারে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে সাংবাদিক সম্মেলন ব্যবসায়ী শ্যামল কান্ত গোপ লিখিত বক্তব্যে বলেন,
আমি দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথপুর বাজারে সুনামের সহিত ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া গ্রামের ওয়াজিদ উল্লার ছেলে উপজেলার চিলাউড়া ইউনিয়ন জামায়াত নেতা রেজাউল করিম রিপন ও জগন্নাথপুর পৌর শহরের বলবল গ্রামের মৃত আব্দুল হেকিম এর ছেলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম( মুফতি ওয়াক্কা) জগন্নাথপুর পৌর শাখার সদস্য সচিব মো:লিটন মিয়া আমাকে আওয়ামী লীগ ট্যাগ দিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখাতেন। এক পর্যায়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে লিটন মিয়াকে আমি ১০ হাজার টাকা দেই। এর পর চলতি বছরের ৩ জুন বিকালে লিটন মিয়া আমাকে ফোন দিয়ে জগন্নাথপুর বাজারস্থ মাহিমা রেষ্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য বললে আমি সেখানে যাই লিটন মিয়া আমাকে নিয়ে এই রেস্টুরেন্টের ভিতরে যান এবং রেজাউল করিম রিপন বাহিরে অবস্থান করেন। তখন লিটন মিয়া আমার নিকট ১লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় আমাকে নানা ভাবে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি প্রদান করেন। আমি কৌশলে সেখান হতে বের হয়ে চলে আসি। এ ব্যাপারে আমি ১৩ই জুন জগন্নাথপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। বিষয়টি জগন্নাথপুর বাজার তদারকি কমিটির সাধারন সম্পাদক মশাহিদ আলীকে অবহিত করি। অভিযোগ দায়ের পর থেকে রেজাউল করিম রিপন ও লিটন মিয়া সহ তাদের লোকজন আমাকে ও আমার পরিবার এর সদস্যদের নানা ভাবে হুমকি প্রদান করে আসছে। এমনকি বিভিন্ন মাধ্যমে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও ক্ষতি সাধন করার হুমকি প্রদান করার পাশা-পাশি জগন্নাথপুর থানায় আমি সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে লিটন মিয়া। যার ফলশ্রুতিতে আমি সহ আমার পরিবার নিরাপত্তা হীনতায় ভূগছি। আমি ও আমার পরিবারের জানমালের নিরাপত্তা সহ নির্বিঘ্নে আমার ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য প্রশাসন,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বাজারের ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জগন্নাথপুর বাজার তদারকি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মশাহিদ আলী, জগন্নাথপুর বাজার বনিক সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাংবাদিক তাজউদ্দীন আহমদ, রাজনীতিবিদ ফারুক আহমেদ ও শফিকুল ইসলাম খেজরসহ জগন্নাথপুর বাজার এর ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন।
শ্যামল গোপের অভিযোগ মিথ্যা ভিত্তিহীন উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে এই দিন রাতে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করেন জগন্নাথপুর বাজারের সহ সেক্রেটারি লিটন মিয়া,লিখিত বক্তব্যে বলেন, সম্প্রতি জগন্নাথপুর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত শ্যামল গোপ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে তার বিরুদ্ধে ও তার শ্যালক উপজেলার হলদিপুর-চিলাউড়া ইউনিয়ন জামায়াতের সহ সেক্রেটারি রেজাউল করীম রিপনের বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর থানায় চাঁদাবাজির একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অপরদিকে, এই অভিযোগের কপি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রপাগাণ্ডা ছড়ায় বাড়ী জগন্নাথপুরের বাসিন্দা ফারুক মিয়া ও তার ভাই শফিকুল ইসলাম খেজর।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ী শ্যামল গোপ তিনির সহপাঠী ছিল। এমনকি তার পাশ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা হওয়ার দীর্ঘদিন ধরে দুজনের সুসম্পর্ক ছিল। অর্থ সম্পর্কিত বিষয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই লেনদেন হতো। সম্প্রতি লিটন মিয়া শ্যামল গোপের দোকানে গিয়ে ১০ হাজার টাকা ধার নেন। কিন্তু শ্যামল গোপের সাথে অন্যের একটি সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ হয়। এরমধ্যে ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বিলম্ব হয়।
এই সুযোগে লিটন মিয়ার সাথে পূর্বে বিরোধ থাকা সুযোগসন্ধানী আওয়ামী লীগ দোসররা শ্যামল গোপকে প্ররোচনা দিয়ে তিনি ও তার শ্যালকের বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করায়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, জগন্নাথপুর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির বিগত নির্বাচনে সাধারণ ব্যবসায়ীদের বিপূল ভোটে সহ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পূর্বে কতিপয় আওয়ামী লীগ দোসররা একটি নির্বাচনের জেরে তার সহ সাধারণ সম্পাদক পদ জোরপূর্বক কেড়ে নেয়। এমনকি বাজার ব্যবস্থাপনা কার্যালয় থেকে তার চেয়ার সরিয়ে নেয়। তার বিরদ্ধে পূর্বে আরেকটি মিথ্যা অভিযোগ করায়। তিনি বলেন, বাজারে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করেনি। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর তারা পালিয়ে যায়। তাদের ধারণা তাকে পূর্বে হেনস্তা করায় জুলাই বিপ্লবের পর জামায়াত নেতা শ্যালক রেজাউল করীম রিপনের কারণে পুলিশ তাদের পিছু নিয়েছে। কিন্তু মোটেও তা নয়। এদিকে, তাদের লোকেরা বিএনপি- জামায়াতের কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীর সাথে আঁতাত করে নানা সুবিধা নিচ্ছে। ব্যবসায়ী শ্যামল গোপের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে তিনি ও তার শ্যালকের সাথে নতুন খেলায় মেতে উঠেছে।
লিটন মিয়া ও তার শ্যালক রেজাউল করীম রিপনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করায় তিনি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন। এমনকি ডামি নির্বাচনে আওয়সমী লীগের অর্থের যোগানদাতা শ্যামল গোপ ও অন্যান্য ফ্যাসিবাদী দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।
দু-পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি সাংবাদিক সম্মেলনে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
যেকোনো সময় দুই পক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে আজ বিকাল ৪ ঘটিকার সময় জগন্নাথপুর যুব ফোরামের উদ্যোগে রেজাউল করিম রিপন মিয়ার উপর মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করা হয়।
জগন্নাথপুর যুব ফোরামের সভাপতি জামাল উদ্দিন বেলাল বক্তব্যে বলেন যদি চাঁদাবাজীর ঘটনায় রেজাউল করিম রিপনের কোনে প্রমাণ দেখাতে পারেন আমরা থাকে থানায় নিয়ে যাবো।
এর পর পরই রেজাউল করিম রিপন ও লিটনকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেন জগন্নাথপুর বাজার ব্যবসায়ী ও পৌরবাসীর ব্যনারে। ব্যবসায়ীদের ব্যনারে বক্তব্য দিয়ে ফারুক মিয়া বলেন আমি বাজারের ব্যবসায়ী আমার তিনটা গাড়ির কাউন্টার আছে চাঁদাবাজীর ঘটনায় জড়িতদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার না হলে কঠোর আন্দোলনের জন্য ডাক দেওয়া হবে।
Helpline - +88 01719305766