অধ্যক্ষের অনিয়মের বিরুদ্ধে উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালন

প্রকাশিত:রবিবার, ০৮ ডিসে ২০২৪ ০৮:১২

অধ্যক্ষের অনিয়মের বিরুদ্ধে উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালন

সুরমাভিউ:-  সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নেছার আহমদ এর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়মের প্রতিবাদ ও শিক্ষকদের বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে ৮ ডিসেম্বর রবিবার কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করেছেন।

কর্মবিরতিকালে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন কলেজে সহকারী অধ্যাপক (যুক্তিবিদ্যা) ইলিয়াছুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক (বাংলা) ও সেক্রেটারী, স্টাফ কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন, সিনিয়র প্রভাষক (সমাজবিজ্ঞান) আফিয়া বেগম, সিনিয়র প্রভাষক (ব্যবসায় সংগঠন) ও গভর্নিয় বডির সদস্য আব্দুল মুনিম, প্রভাষক (হিসাব বিজ্ঞান) খয়ের আহমদ, প্রভাষক (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি) সালমা আক্তার, প্রভাষক (অর্থনীতি) নাছরিন জাহান, সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) আমিনুল হক প্রমুখ।

শিক্ষকদের কর্মবিরতির খবর শোনে এডহক কমিটির সভাপতি মোঃ ময়নুল হক ও বিদ্যুৎসাহী সদস্য প্রভাষক মোনায়েম খান, রামপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনসুজ্জামান খান, দৈনিক ঘোষণার বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ আশিকুর রহমান রানা, বিশ্বনাথ সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন ইমরান, বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সদস্য নূর উদ্দিন, বিএনপি নেতা হেলালুল ইসলাম হেলাল, জয়নাল আবেদীন, রামপাশা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ইসলাম উদ্দিন, যুবনেতা সুন্দর আলী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ কলেজ ক্যাম্পাসে যান। তাঁরা শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া শোনে তাদের সাথে আলোচনা করে তাদের কর্মবিরতি স্থাগিত ঘোষণা করেন।

সভাপতি মোঃ ময়নুল হক তার বক্তব্যে আগামী ১৫ ডিসেম্বর মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের দাবী-দাওয়াগুলো সমাধান করার আশ্বাস প্রদান করেন এবং আগামী ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার থেকে যথারীতি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান।

উল্লেখ্য, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নেছার আহমদ এর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবীতে গত ২৬/১০/২৪ ইং তারিখে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ঢাকার পরিচালক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ।

স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়, উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নেছার আহমদ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্চাচারিতা করে যাচ্ছেন। সকল প্রকার নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তিনি নিজের ইচ্ছেমত কলেজ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তাঁর স্বেচ্চাচারিতা ও অনিয়মের কারণে কলেজের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীরা হয়রানীর শিক্ষার হচ্ছে। তিনি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারীভাবে কলেজের সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকেন। তাঁর স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষকদের হেনস্থা ও অপদস্থ করে থাকেন। তার স্বেচ্ছারিতা ও অনিয়মের কয়েকটি নমুনা তুলে ধরা হল- ১. বিভিন্ন ব্যংকে কলেজের ছয়টি একাউন্ট রয়েছে যার অনেক গুলো তাঁর একক স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়। দু’একটি একাউন্ট কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতিকে বাদ দিয়ে তাঁর আজ্ঞাবহ একজন সদস্য নিয়ে যৌথ ভাবে পরিচালনা করেন। ২. কলেজে প্রতিবছর একাদশ শ্রেণিতে প্রায় তিন শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়, এদের কাছ থেকে তিন হাজার আটশত টাকা করে ভর্তি ফি আদায় করা হয়। ৩. কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে প্রতিবছর প্রায় একশত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়, এদের কাছ থেকে তিন হাজার সাতশত টাকা করে ভর্তি ফি আদায় করা হয়। স্নাতক শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় ফরম পূরণ ফি বাবদ প্রতি বর্ষে ছাত্র-ছাত্রী প্রতি চার হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। ৪. দ্বাদশ শ্রেণি ও স্নাতক দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে এক হাজার পাঁচশত টাকা করে সেশন ফি আদায় করা হয়। ৫. উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণিতে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর বেতন তিনশত টাকা করে আদায় করা হয়। ৬. কলেজের আভ্যন্তরীন পরীক্ষায় পাঁচশত টাকা করে ফি আদায় করা হয়। এসব টাকার সুষ্ঠু কোন হিসাব নেই। প্রশ্নপত্র কলেজের নিজস্ব ফটোকপি মেশিনে ফটোকপি করা হলেও ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ফটোকপির বিল নেয়া হয়। ৭. উচ্চ মাধ্যমিক চূড়ান্ত পরীক্ষা-২০২৩ এর ফরম পুরণের সময় ছাত্র-ছাত্রী প্রতি তিন হাজার পাঁচশত টাকা করে নির্ধারণ করে কোন কোন ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা থেকে দশ/ বারো হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। ৮. ফরম পূরণের একমাস পর এইচ.এস.সি ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হলেও ছাত্র- ছাত্রীদের কাছ থেকে আইসিটি বিষয়ের কোচিং ফি বাবদ অতিরিক্ত এক হাজার পাঁচশত টাকা করে আদায় করা হয়। ৯. কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির অনুকুলে প্রাপ্ত টিউশন ফি’র টাকা সাধারণ তহবিল এ জমা বা বিধিমোতাবেক খরচ করা হয় না। ১০. ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রাপ্ত এস,এম,এস এর টাকার কোন হিসেব নেই। ১১. কলেজ থেকে পাশ করার পর প্রসংশাপত্র ও সার্টিফিকেট প্রদান কালে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বিনা রসিদে পাঁচশত টাকা গ্রহণ করা হয়। এসকল টাকা কলেজের কোনো হিসাবেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ১২. দাতা, হিতৈষী প্রদত্ত ও সরকারি অনুদানের বিভিন্ন অর্থে যথাযথ কোন হিসেব নেই।

উল্লিখিত সকল খাতের টাকা কিছু ব্যংক একাউন্টে, কিছু নগদ রসিদ দিয়ে, কিছু নগদ বিনা রসিদে এবং কিছু অধ্যক্ষ মহোদয়ের ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে আদায় করা হয়। বিধি মোতাবেক আদায়কৃত টাকা কলেজের সাধারণ হিসাবে জমা করার কথা থাকলেও তিনি সম্পূর্ণ টাকা ব্যাংকে জমা করেন না।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, প্রতি বছর কলেজের আয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। কলেজের গভর্নিংবডির পূর্ব অনুমোদন থাকা স্বত্তেয় তিনি শিক্ষক কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের কলেজের অংশ, অনুমোদিত বাড়ি ভাড়া ও উৎসব ভাতার অংশ প্রদান না করে বিভিন্নভাবে অর্থ আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। তিনি অনেক টাকা বিনা রসিদে আদায় করে আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও এ সকল টাকা খরচ করার ক্ষেত্রে তিনি কখনো পিপিআর মেনে চলেন না। নিজের খেয়াল খুশিমতো টাকা খরচ দেখিয়ে ভূয়া বিল ভাউচার এর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেন।

কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া, মিলাদ, জাতীয় দিবস উদযাপন, আপ্যায়ন, যাতায়াত বিল, অফিস স্টেশনারি ক্রয় ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি এককভাবে নাম মাত্র খরচ করে ভূয়া বিল ভাউচার করে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে চলছেন।

কলেজে কোনো বছরই বার্ষিক বাজেট প্রনয়ন করা হয়নি। ফলে অধ্যক্ষ যখন খুশি যেমন ইচ্ছে সেরকম অর্থ খরচ করে থাকেন। কলেজে কোন প্রকার অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি, ক্রয় কমিটি, উন্নয়ন কমিটি বা অন্যান্য কমিটি নেই। অধ্যক্ষ মহোদয় উনার অনুগত এবং বিভিন্নভাবে সুবিধা প্রদান করে, দু’একজন শিক্ষক দিয়ে কাগজে কলমে নামমাত্র কয়েকটি কমিটি করে কলেজ পরিচালনা করেন।
অধ্যক্ষ মহোদয় কলেজের টাকা নিয়মবহির্ভূত ভাবে খরচ করে ব্যক্তিগত ভোগবিলাসিতা করে থাকেন। সরকারি অফিস আদালতে যেখানে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এসি চালানো সীমিত করা হয় সেখানে আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ তাঁর অফিসে দুটি এসি লাগিয়েছেন। কলেজে শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য প্রতিদিন এক কাপ লাল চা ও সাধারণ বিস্কিট বরাদ্ধ থাকলেও অধ্যক্ষ মহোদয় এর জন্য প্রতিদিন দুধ চা, কফি ও উন্নত মানের বিস্কিট বরাদ্ধ থাকে। প্রতিমাসের আপ্যায়ন বিল দেখলে এসব প্রমাণ পাওয়া যাবে।

কলেজে নিয়োগের ক্ষেত্রেও তিনি অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। তিনি বিগত একটি নিয়োগে তাঁর অনুগত হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক খয়ের আহমদ এর সহধর্মীনী ফাহিমা বেগম শাম্মী কে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে, তাঁর মামাতো ভাই রুবেল আহমদ কে এম,এল,এস,এস এবং আপন শ্যালক ফয়েজ আহমদ কে কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দিয়েছেন। অধ্যক্ষ মহোদয় সকল অপকর্মে এসকল কর্মচারী সহযোগিতা করে যান।

কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচনের ক্ষেত্রেও অধ্যক্ষ মহোদয় চরম স্বেচ্চাচারিতা দেখিয়েছেন। অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য বিধিমোতাবেক কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়নি। অধ্যক্ষ নেছার আহমদ নিজ পছন্দের এবং অনুগত কয়েকজন অভিভাবককে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। কলেজে কোন প্রকার নির্বাচনের নোটিশ প্রদান করেননি বা বিধিসম্মত প্রক্রিয়া অবলম্বন করেননি। আমাদের ধারণা তিনি গোপনীয় ভাবে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জাল কাগজ পত্র তৈরী করে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন। একইভাবে গভর্নিং বডিতে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য কোন বৈধ প্রক্রিয়া করেননি। বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে এর সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যাবে। কলেজে তাঁর অনুগত ব্যক্তিদের নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করেই যাচ্ছেন। কলেজের সকল শিক্ষক ও অভিভাবকদেরকে জিজ্ঞেস করলে এসবের প্রমাণ পাওয়া যাবে।

এসকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে অধ্যক্ষ মহোদয় নারী শিক্ষকদের প্রতি অশালীন আচরণ করেন। কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক আমিনুল ইসলাম এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাঁকে কর্মচারী দিয়ে শায়েস্তা করবেন বলে হুমকি প্রদান করেন।

কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে তিনি সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন এবং সিসি ক্যামেরা মনিটরে সব সময় ক্লোজ করে রাখেন যা আমাদের নারী শিক্ষকদের জন্য খুবই বিব্রতকর।

বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উক্ত অনিয়ম সমূহ বন্ধের জন্য আশু আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ঢাকার পরিচালক এর নিকট জোর দাবী জানান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ