প্রফেসর ইউনূসের কোনো রাজনৈতিক অভিলাস নাই: সিইসি

প্রকাশিত:রবিবার, ২৪ নভে ২০২৪ ০৮:১১

প্রফেসর ইউনূসের কোনো রাজনৈতিক অভিলাস নাই: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেন,এই সরকার সেই সরকার নয়, যেই সরকার চাপ দেয়। আগের সরকার চাপ দিয়েছে কারণ তাদের দলীয় অ্যাজেন্ডা ছিল।প্রফেসর ইউনূসের কোনো রাজনৈতিক অভিলাস নাই।

রবিবার (২৪ নভেম্বর)  বিকেলে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য চার নির্বাচন কমিশনাররা সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।

আগের কমিশনগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সর্বশক্তি দিয়ে সবকিছু করবে। কিন্তু রাজনৈতিক চাপ যেটা আসে সেই দিক থেকে কতটুকু নিশ্চয়তা আপনারা দিতে পারবেন?এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, শোনেন, শতভাগ নাও হইতে পারে আপনাদের (গণমাধ্যমের) বিবেচনায়। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে শতভাগ। এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের শতভাগ চেষ্টা থাকবে। আপনারা তো একেক ধরনের মতবাদ দিতেই পারেন। আগে ডামি নির্বাচন হয়েছে, ১৫৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। এই জন্যই বললাম-আমাদের আগমন কিন্তু ওইগুলো মোকাবেলা করার জন্যই। ওইরকম যাতে না হয়, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পাঠিয়েছেন, এইরকমই মনে হয় এখন।

তিনি বলেন, আমি এটাকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছি, আপনার চ্যালেঞ্জ বলছেন তো। শেষ জীবনে এসে জাতির জন্য কিছু করার আমি একটা সুযোগ পেয়েছি। আমি এবং আমরা সহকর্মীরা অনুভব করছি যে, শেষ জীবনে এসে একটি সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগ আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। আমরা যেন এই সুযোগটার সদ্ব্যবহার আমরা করি। এখানে যদি আমরা ফেল করি, তাহলে এই দেশের ভোটিং সিস্টেমের কী হবে আপনারা বুঝতেই পারতেছেন।

আপনাদের উদ্দেশ্য সৎ থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে আপনার কতখানি করতে পারবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সরকার সেই সরকার নয়, যেই সরকার চাপ দেয়। আগের সরকার চাপ দিয়েছে কারণ তাদের দলীয় অ্যাজেন্ডা ছিল। এই সরকারের তো কোনো অ্যাজেন্ডা নাই। প্রফেসর ইউনূসের কোনো রাজনৈতিক অভিলাস নাই। উনি একটা অবধা, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় হতে চান। উনি মুক্তি পেতে চান, এই কথা বলেছেন। সুতরাং উনার বা উনার সরকারের তরফ থেকে কোনো চাপ নাই। অতীতে তো চাপ ছিল। ওইটাই ছিল বড় চাপ। আমাদের তো ওই চাপ নাই। আমরা বুঝতেছি যে আমাদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের তরফ থেকে যা করার করবো আপনাদের, গণমাধ্যমও জনগণকে সাথে নিয়ে। সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের চাপ নাই। আমি কনভিনসড যেকোনো ধরনের চাপ থাকবে না।

জাতীয় নির্বাচন, নাকি স্থানীয় নির্বাচন আগে করবেন এবং নির্বাচন কবে নাগাদ করবেন-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকে মাত্র দায়িত্ব নিলাম। একটা দিনক্ষণ দিয়ে বলতে পারবো না। তবে যে কোনো নির্বাচন করতে গেলে আমাদের কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ তো থাকে। এছাড়াও কিছু সংস্কার তো থাকে। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা তো চলতেই থাকবে। তবু প্রয়োজনীয় সংস্কার তো করতেই হবে।

তিনি বলেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন হোক, কেউ বলছেন আগের মতো হোক। কেউ বলছেন যে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, কেউ বলছেন আগের মতোই। এখন সংখ্যানুপাতিক সিস্টেম আসে তাহলে সেই ভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এই ধরনের জিনিসগুলো ফয়সালা না হলে আমরা কীভাবে ভোটটা করবো। সুতরাং সরকার তো অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করে দিয়েছে। নির্বাচনের জন্য যে কমিশনগুলো সম্পৃক্ত তাদের যে সাজেশন আসবে, নির্বাচন করার জন্য যা যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, তা আমরা নেবো। তারপর ভোট করার মতো সবকিছু যখন প্রস্তুত হবে তখনই আমরা নির্বাচনের জন্য ডেট দেওয়ার মতো বিষয়গুলো চিন্তা করতে পারবো।এখন বলে দিলাম যে এক বছর পর নির্বাচন হবে। কিন্তু এক বছর পর দেখা গেলো কোন পদ্ধতিতে হবে সেটাই ফয়সালা করতে পারে নাই।

তিনি আরো বলেন, কেউ বলে যে স্থানীয় সরকারের ভোট আগে করেন, কেউ বলে জনগণের হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যান।… তো কমিশনগুলো এখন কী রিপোর্ট দেয়, উনারা কী পরামর্শ দেন, সরকার কতটুকু গ্রহণ করে, সেগুলো ফয়সালা না হলে আমি নির্বাচন করবো কীভাবে। এগুলো একটার সঙ্গে আরেকটার সম্পর্ক আছে। আর এতো জাতি হিসেবে এতো অধৈর্য হওয়ার কোনো কারণ নাই। কারণ ডেডলাইন দিয়ে দিয়েছে তো। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনগুলোকে সুপারিশ দেওয়ার জন্য। আমাদের বাঙালিদের জন্য ডেট একটু বাড়াই দিতে হয়। ৩১ ডিসেম্বর হচ্ছে শেষ সময় সংস্কার প্রস্তাব দেওয়ার। আর প্রধান উপদেষ্টা তো বলেছেন- আপনারা সুপারিশগুলো দেন, এগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবো। তারা যে বিষয়গুলো নিয়ে একমত হবে, সেগুলো আমরা গ্রহণ করবো। আর যেগুলো নিয়ে বিতর্ক হবে, সেগুলো আমি পরবর্তী সরকারের জন্য রেখে দিয়ে যাবে। যে সংস্কারগুলো গ্রহণ হবে সেগুলো নিয়ে আমরা কাজে নেমে পড়বো। তবে আমাদের তরফ থেকে আমরা যথাসম্ভব আজকে থেকেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবো। কিন্তু পারবো নাতো। সংস্কার না আসলে পারবো না। নির্বাচন করার জন্য যে সংস্কারগুলো প্রয়োজনীয়, সেগুলো করতে হবে। ওগুলো ছাড়া করা যাবে না। ওগুলো হলে নির্বাচন হবে। অনেকগুলো সংস্কার ইন্টাররিলেটেড। এখন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন একটা সুপারিশ দিলেও তো আমরা করতে পারবো, যদি সেটা অন্য কমিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়।

দল ৫০টির মতো। সরকারের সঙ্গে আলোচনা  ১০ থেকে ১৫টি দল জায়গা পাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সহ বাকি যে নিবন্ধিত দল আছে, সেগুলো নিয়ে আপনার ভাবনা কী-এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমাদের এই কমিশনের কিছু অ্যাডভান্টেজ আছে। যেটা আগের তিন কমিশনের ছিল না। এর কারণ কী জানেন-যেহেতু সরকারে কোনো দল নাই। প্রধান উপদেষ্টার কোনো অ্যাজেন্ডা নাই। চাপ নেই, এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট রিলিফ। দ্বিতীয় আরেকটা হচ্ছে-রাজনৈতিক দলগুলো তো ১৫ বছর থেকে বলছে ভোটের অধিকার চাই। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এই যুদ্ধ করছে ১৫ বছর ধরে। তারা জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আমরা শুধু বলবো- আপনার ১৫ বছর যে জিনিসটার জন্য আন্দোলন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, আমরা এই কাজটা করতে চাই। আমাদের সঙ্গে আসেন। ওরা তো আমাদের না করতে পারবে না। কেননা, এটার জাতির সঙ্গে তাদের ওয়াদা। লাস্ট ১৫ বছর তারা অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান।

তিনি বলেন, ছোট বড় ব্যাপার না। প্রত্যেক দলেরই তো ভোটের অধিকার থাকবে। আমাদের সংস্কার তো কাজ করছে। তারা তো একটা সুপারিশ দেবে। তারা সুপারিশ দেওয়ার পরে বিবেচনা করে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যেটা দাঁড়ায়, সেটা হবে। আর বড় পার্টি, আওয়ামী লীগ এবং আরো যারা জোটের মধ্যে আছে ১০, ১২টা; ওটা নিয়ে তো সিরিয়াস বিতর্ক চলছে, আছে। আপনারাও দেখছেন, আমরাও দেখছি। এই বিতর্কের ফয়সালাটা হোক। ভোটের আরো দেরি আছে তো। আজ-কাল-পরশু তো হচ্ছে না। সুতরাং আওয়ামী লীগের ব্যাপারটা ফয়সালাটা হয়ে যাক। আমরাও অপেক্ষা করতেছি ফয়সালাটা কী আসে দেখি। তাহলে সেইভাবেই আমরা ব্যবস্থা নেবো। এই মুহূর্তে আমি বিগত সরকারি দল এবং তার সহযোগী যারা ছিল আমি নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। এটা জাতিগতভাবে ফয়সালা ব্যবস্থা হোক। সময় আসলে আপনারা দেখতে পারবেন।

গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সিইসি পদে অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএমএম নাসির উদ্দীনকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নিয়োগ দেন। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্মসচিব তহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ