১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
প্রকাশিত:শুক্রবার, ১২ জানু ২০২৪ ০৯:০১
সাবেক মেয়র কামরানের মৃত্যুর পর তার বিকল্প হিসেবে সিলেটে হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালা হিসেবে একজনকে খুঁজছিল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তার খোঁজ মিললো লন্ডনে। তিনি সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। শুধু বাঁশিওয়ালাই খোঁজা হলো না; হয়ে গেল টিমওয়ার্ক। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসে হলো এর পূর্ণতা। ওই টিমওয়ার্কের সদস্যদের মধ্যে একে একে এমপি নির্বাচিত হলেন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, হাবিবুর রহমান হাবিব ও রনজিত সরকার। আগেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে যান নাসির উদ্দিন খান। সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুনদের জয়জয়কার। নতুন ফরম্যাট।
তবে, এই পাঁচজনের মধ্যে বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে আছেন কেবল নাসির উদ্দিন খান। বাকি চারজনই একই ধারায়, একই সূত্রে গাঁথা।
ক’বছর আগে সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েও না হওয়া শফিউল আলম চৌধুরীর ভাগ্য খুলে যায় কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের সময়। সবাইকে টপকে সিলেট থেকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হন তিনি। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকার টিকিট পেয়ে চমক দেখান। সম্পূর্ণ নতুন মুখ নাদেল নির্বাচনে বাজিমাত করে প্রথমবারের মতো এমপিও নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে, সিলেটের আধিপত্য এখনো ধরে রেখেছেন নাদেল। সিলেটের রাজনীতিসহ নানা দিকে রয়েছে তার একচ্ছত্র প্রভাব। নাদেল-নাসির সিলেটের ছাত্রলীগের রাজনীতির জুটি। নাদেল যখন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তখন নাসির ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। নাদেল সিলেট থেকে ঢাকার রাজনীতিতে চলে গেলেও নাসির সিলেটেই আসন গেড়েছেন। সিলেট জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান তিনি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও তাদের অবস্থান বিপরীতমুখী। রাজনীতির মাঠের বৈপরীত্য অবস্থা হলে দু’জনই সফল। সমান কর্তৃত্ব নিয়ে চালাচ্ছেন নিজেদের রাজনীতি।
ওদিকে নগরের অধিপতি হওয়ার আগে আনোয়ারুজ্জামান সিলেট-৩ আসনে হাবিবুর রহমানকে নিয়ে ধরেছিলেন বাজি। সফল হলেন। হাবিবুর রহমান হাবিবকে সিলেট-৩ আসনে এমপি’র আসনে অধিষ্ঠিত করলেন। এবারের নির্বাচনেও ঝুলছিল হাবিবের মসনদ। কাণ্ডারী আনোয়ার। ভোটের মাঠে নানা ঘটনা। হাবিবের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেটি সহজ করে দিলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। কুলাউড়ায় নাদেলকে নিয়ে ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আনোয়ার ছিলেন অগ্রভাগে। সিলেট থেকে কুলাউড়া গিয়ে তিনি প্রচারণা চালিয়েছেন। সিটি নির্বাচনে যে নাদেলের কাঁধে ভর দিয়ে আনোয়ার এসে সিলেটে অবস্থান গেড়েছিলেন সেই নাদেল হলেন কুলাউড়ার এমপি। নাদেলের এই জয়ে প্রশংসায় ভাসছেন আনোয়ার। এবার একেবারে নতুন মুখ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রনজিত সরকারকে নিয়ে ভোটের মাঠে বাজি ছিল আনোয়ারের।
সুনামগঞ্জ-১ আসনে রনজিতের নৌকার টিকিটে আনোয়ারের অবদান রয়েছে; এমনটি স্বীকারও করেন তার বলয়ের নেতারা। ভোটের মাঠ সহজ ছিল না রনজিত সরকারের। মেয়র আনোয়ার গিয়ে সুনামগঞ্জেও প্রচারণায় অংশ নেন। প্রথমবার মনোনয়ন পেয়েই এমপি হলেন রনজিত সরকার। বলা হচ্ছে, আনোয়ার ‘ম্যাজিক’। সিলেটে শুধু মেয়র হলেন না আনোয়ার, সঙ্গের ৪ বন্ধুকে দেখালেন সংসদের পথ। এ কারণে তাকে অনেকেই ম্যাজিকম্যান হিসেবেও আখ্যায়িত করছেন। মৌলভীবাজারে নাদেল, সিলেটে আনোয়ার, হাবিব, সুনামগঞ্জে রনজিত। অন্যদিকে জেলা পরিষদের নাসির উদ্দিন খান। পাঁচজনই একই সময়ে বেড়ে ওঠা, একসঙ্গে রাজনীতি করা রাজনীতিবিদ। তাদের হাতেই এখন সিলেটের কর্তৃত্ব। ইতিমধ্যে মেয়র আনোয়ারের কাছ থেকে ভিন্ন সিলেটের আভাস। উন্নয়নে তারা সিলেটকে গড়ে তুলতে চান নান্দনিক। পূরণ করতে চান সিলেটের মানুষের আশাও। সিলেটে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী সফর থেকে উন্নয়নের নতুন রোডম্যাপ মিলেছে। এর মধ্যে রয়েছে সিলেটে সুরমায় আরেকটি সেতু, নগরে মেট্রোরেল চালু। এ ছাড়া- পর্যটন খাতকে প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়ন করা। আকাশ ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করা। আর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত উন্নয়ন এখন নতুন নেতাদের হাতেই। কী হয় সামনে, সিলেটে এটি এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।
Helpline - +88 01719305766