সুরমাভিউ:- সিলেট সদর উপজেলার ৩নং খাদিমনগর ইউনিয়নে টিলাখেকোদের তাণ্ডব চলছে। প্রায় ১০ থেকে ১৫ ফুট গভীর গর্ত খুঁড়ে টিলার মাটি বিক্রি করছে ইটভাটায়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে বারবার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থাই তারা নিচ্ছেন না বলে জানালেন সচেতন এলাকাবাসী।
বুধবার দুপুরে সরজমিনে সিলেট সদর উপজেলার ৩নং খাদিমনগর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মোড়ারগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জালাল মিয়ার পুরানবাড়ি হিসাবে খ্যাত দুলাকোনা আড়িখাইরপারের টিলার কয়েকশ’ গজ জায়গাজুড়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ ফুটের মতো গর্ত করে মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। ভরদুপুরেও সেখানে একটা এক্সেভেটর দেখা যায়। গত কিছুদিন থেকে কখনো প্রকাশ্যে দিনের আলোয় কখনোবা রাতের আঁধারে এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র এ টিলা থেকে মাটি নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করছে বলে জানিয়েছেন এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র।
সূত্রগুলো জানায়, এই টিলাখোকো চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে ধুপাগুলের কুনু মিয়ার ছেলে মুহিবুর রহমান সুলেমান। সরকারি এই খাস টিলাটির মালিকানা দাবি করে উমদারপাড়া গ্রামের মৃত মনাফ মিয়ার ছেলে মন্তাজ মিয়া অবৈধভাবে টিলাটির মাটি বিক্রি করেছেন মুহিবুর রহমান সুলেমান, ধাপনা টিলা গ্রামের সুলতান মিযার ছেলে লিয়াকত মিয়া ও অসিদ উল্লাহর ছেলে হোসেন মিয়ার কাছে। তাদের সাথে এই অবৈধ ব্যবসায় জড়িত রঙ্গিটিলা গ্রামের মো. মাহমদ আলীর ছেলে মো. সিদ্দেক আলী ও মো. আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. আব্দুল হক।
টিলাটি খরিদাসূত্রে মালিকানা দাবি করেন একই এলাকার ইনো মিয়ার ছেলে জালাল মিয়া। তিনি জানান, তার বাবা ১৯৮৫ বা ৮৬ সালের দিকে এই বাড়িটি ক্রয় করেছিলেন একই এলাকার আব্দুর রজ্জাকের ছেলে আব্দুল জলিলের কাছ থেকে। তিনি এখানে কয়েক বছর বসোবাস করলেও চোর এবং ডাকাতের উৎপাতে বাড়ি ছেড়ে পাশের গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হন। এ অবস্থায় গত ২০২০ সালে মহামারি করোনার সময় থেকে ভুমিখেকো মন্তাজ ও তার পরিবারের সদস্যরা এটি নিজেদের টিলা দাবি করে দখল করার পাঁয়তারা করতে থাকে। জালাল ক্রয় সূত্রে মালিকানা দাবি করলেও তার কাছে কোনো দলিলপত্র না থাকায় মন্তাজ আলী দীর্ঘদিন থেকে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করতে থাকেন।
এ ব্যাপারে জালাল বারবার সিলেট মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানা ও সিলেট সদও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বরাবর মৌখিক অভিযোগ দিলেও কোনো লাভ হয়নি। মাটি কাটতে কাটতে টিলাটি এখন ১০ থেকে ১৫ ফুট গভীর একটি পুকুরে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে টিলাখেকো চক্রের মূল হোতা মুহিবুর রহমান সুলেমানের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
সরকারি টিলাটির মালিক দাবি করে মাটি বিক্রি করা মন্তাজ মিয়া বলেন, টিলা কেটে মাটি বিক্রি করেছি আমি। তবে যখন বেআইনী জানতে পারি তখন ওদের বলে দিয়েছি। আর এখান থেকে মাটি নেয়া হবেনা। একই কথা বলেন, মাটির অন্যতম ক্রেতা ও টিলাখেকো লিয়াকত আলী।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার বলেন, মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে আমি তদন্তের জন্য পাঠিয়েছিলাম। রিপোর্টও পেয়েছি। আগামী মিটিংয়ে টাস্কফোর্সের কাছে হস্তান্তর করবো।
তিনি আরও বলেন, দিনে কেউ টিলা কাটলে এবং আমাকে জানালে আমি তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কিন্তু রাতে মাটি কাটলে সেক্ষেত্রে টাস্কফোর্স ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে সিলেট সদরের সহকারি ভূমি কমিশনার আসমা জাহান সরকার এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি একটি ট্রেনিংয়ে আছেন। তবু, সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানালে তিনি অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাঈন উদ্দিন শিপন বলেন, আমরা অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাইনি। পুলিশের খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।