নিজস্ব প্রতিবেদক:- বিএনপির ডাকা অবরোধে গতকাল দিবাগত রাত প্রায় ১ ঘটিকার সময় মৌলভীবাজার কোদালিপুলে একটি পিকআপ গাড়ী আগুনে পুড়ে যায়।
আগুন লাগার পর আশেপাশের লোকজন এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই গাড়িটি প্রায় পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
স্হানীয়রা জানান, কিভাবে আগুন ধরছে তারা বলতে পারেন নি।
বিএনপির সমাবেশ ভণ্ডুল হওয়ার পর গত ২৯ অক্টোবর থেকে যে অবরোধ-হরতাল চলছে, সেই কর্মসূচি ঘিরে সারাদেশে ২৯০টি যানবাহনে আগুন দেওয়ার খবর পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২৯০টি যানবাহনের পাশাপাশি ১৭টি স্থাপনাসহ মোট ৩৭৬টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে।
তবে মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছিল, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ১৮৫টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনায় আগুন দেওয়ার খবর পেয়েছে তারা।
নাশকতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে পুলিশ বলছে, “গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি মহাসমাবেশ পরবর্তী হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে। তারা সাধারণ মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে নাশকতা ও হিংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। তারা দেশের সাধারণ নাগরিকদের ওপর পৈশাচিক ও ঘৃণ্য কার্যকলাপে লিপ্ত হয়।
“পুলিশকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে নাশকতাকারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট পরে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, যা জনগণের কাছে এখন স্পষ্ট।”
এ সময় এক পুলিশ সদস্যসহ মোট ছয়জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর দলটির মহাসমাবেশ ভণ্ডুল হয়ে যায়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধের মত কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি।
তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামী এবং সমমনা দলগুলোও একই কর্মসূচি দিচ্ছে আলাদা আলাদাভাবে।
এর মধ্যে ছয় দফায় ১৩ দিন অবরোধ এবং দুই দফায় তিন দিন হরতাল করেছে দলগুলো। সপ্তাহের দুই ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার ছাড়াও তিনটি মঙ্গলবার কর্মসূচিতে বিরতি দেওয়া হয়।
পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অগ্নিসংযোগের বাইরে এ সময়ে ২৭৫টি যানবাহন ভাংচুর, ২৪টি স্থাপনা ভাংচুরসহ মোট ৩১০টি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
হরতাল-অবরোধ চলাকালে ৩১ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত রেলওয়েতে ২৪টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল, জামালপুর ও সিলেটে তিনটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
ছয়টি ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারা হয়েছে। রেললাইনে ৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, সিলেট, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে রেললাইন কেটে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। গাইবান্ধায় রেললাইনের ফিস প্লেট খোলার চেষ্টাও করা হয়েছে।
পাবনায় ট্রেনে পেট্রোল ও ডিজেল ভর্তি বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জে রেললাইনের উপরে অতিরিক্ত ৩ ফুট লম্বা ৩ ইঞ্চি চওড়া পাত সংযোজন করে নাশকতার চেষ্টা করা হয়েছে।
পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৯ জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। আর কুমিল্লায় ২১ নভেম্বর পর্যন্ত অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একজন এবং পিকেটিংয়ের সময় ১৬ জনকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের অনেকেই নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
সবাইকে ভাঙচুর ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে পুলিশ বলেছে, অবরোধ-হরতালে পরিবহন বা স্থাপনা ভাংচুর, অগ্নিসংযোগকারীদের উপযুক্ত প্রমাণসহ ধরিয়ে দিলে অথবা সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।