১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
প্রকাশিত:শনিবার, ১১ নভে ২০২৩ ০১:১১
বিশেষ প্রতিনিধি:- ছাতকে দুশ’বছরের খাসভুমি খেলার মাঠ বন্দোবস্ত নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ খাসজমি বন্দোবস্ত ভূমি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ ও মামলা মোকদ্দমা। দু’টি পক্ষ রয়েছেন এখন মুখোমুখি অবস্থানে। যে কোন সময় দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিনব কায়দায় কোটি টাকার সরকারি জমি বন্দোবস্ত র্শত ভঙ্গ ও তথ্য গোপন করে লিজ নেন ভুমিখেকো চক্ররা। কিন্তু জমি বরাদ্দের পরপরই বদলে যায় নামের তালিকা, নথিপত্র। প্রকৃত ভূমিহীনদের নাম বাদ দিয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের নাম যুক্ত হয় তালিকায়। বিক্রী বাণিজ্যের এ মহোৎসব প্রকাশ্যে, রক্ষকরা হয়ে যান ভক্ষক। কেউ কেউ রাতারাতি সরকার দলীয় নেতাও বনে যান এলাকায়। এ নিয়ে গ্রামবাসীর দু’পক্ষের মধ্যে গত শনিবার সকাল থেকে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের জাহিদপুর গ্রামের মৌজার জেএল নং-৪৪৮ আরএস ৪৪৬ খতিয়ান নং-এসএ ১, আরএস ৩১১৮, দাগ নং-৩৮১০ ও আরএস ৪৬৫২, শ্রেনি-সাবেক লায়েক পতিত বর্তমান খেলার মাঠের ৩.২৭ একর ভূমি রয়েছে। এ মাঠটি প্রায় দুইশ বছরের বেশি সময় ধরে এলাকারবাসী খেলাধুলা ও সামাজিক অনুষ্ঠান করে ব্যবহার করে আসছে। প্রায় ২০ বছর আগে এ খেলার মাঠের কিছু অংশ অর্থাৎ এক একর ভূমি বন্দোবস্ত আনেন ভাতগাঁও ইউনিয়নের বরাটুকা গ্রামের মহেশ রঞ্জন বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি।
ভূমিহীন পরিবার দেখিয়ে তিনি এ বন্দোবস্ত নিয়েছেন। পরে জাহিদপুর গ্রামের পঞ্চায়েতির প্রয়োজনে নগদ দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে মহেশ রঞ্জন বিশ্বাসের কাছ থেকে ওই বন্দোবস্তকৃত ভূমি ক্রয় করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে যখন গ্রামের পঞ্চায়েত সরকারি ভূমি ব্যবহার করলে ও এলাকায় বিশাল আয়তনের সরকারি জমি আত্মসাতে মরিয়া একটি প্রভাবশালী ভূমি খেকোচক্র বেশ তৎপর হয়ে উঠে। ভূমিহীন হতদরিদ্রদের নামে বরাদ্দ দেওয়া জমিতে গোপনে চলছে বিত্রিæ বাণিজ্য’। ভূমিহীন সেজে নামে-বেনামে একাধিক জায়গা বন্দোবস্ত নিয়েছেন কোটিপতিরা। জাহিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা, মহিলা হাফিজিয়া মাদরাসাসহ গ্রাম পঞ্চায়েত লোকজনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ২০১৯ সালে কোটিপতি ভূমিহীন পরিবার সেজে সরকারি ভূমি খেলার মাঠের অবশিষ্ট কিছু অংশ রাতারাতি বড় অংকের টাকার বিনিময় দুনীতিবাজরা কর্মকতা কর্মচারিরা বন্দোবস্ত দেয়।
অভিযোগ উঠেছে, বন্দোবস্ত শর্ত ও নিজেদের তথ্য গোপন করে তারা সকলেই এ ভূমির বন্দোবস্ত গ্রহণ করেছে।
বন্দোবস্ত গ্রহণকারিরা হলেন, জাহিদপুর গ্রামের কাঁচা মিয়ার বিদেশ ফেরত পুত্র সুজন মিয়া। তার নামে রয়েছে ৩৮০১ ও ৩৮১০ দুই দাগে ৬০ শতক সরকারি ভূমি। সুজন মিয়ার পিতার নামে সরকারি ১.২০ শতক ভূমি বন্দোবস্ত রয়েছে। তার পরিবারের একাধিক সদস্যরা ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছেন। মারফত আলীর পুত্র মফিজ আলীর নামে সরকারি ৬০ শতক সরকারি ভূমি বন্দোবস্ত রয়েছে। মারফত আলীর নামে বন্দোবস্ত রয়েছে সরকারি ৭৫ শতক ভূমি। এছাড়া মফিজ আলীর এক পুত্র ফ্রান্সে ও এক কন্যা যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আলীর স্ত্রী রুফেজা বেগমের নামে রয়েছে সরকারি ৫০ শতক ভূমি। তার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আলীর নামেও রয়েছে সরকারি ১ একর ৫০ শতক ভূমি। তাদের পরিবারের একাধিক সদস্যরা রয়েছেন সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে। সকলের বাড়িঘরও পাকা দালান।
জাহিদপুর গ্রামের মুরব্বি আলমাছ আলী ও আবদুল জলিল, দবির মিয়া, জমির আলী, তোফায়েল, মাসুক আহমদসহ পঞ্চায়েতের একাধিক লোকজনরা এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রায় দুই শত বছর আগ থেকে গ্রামের পূর্ব পুরুষরা এ মাঠে সামাজিক অনুষ্ঠান, সরকারি ভূমির পার্শ্ববর্তী দুটি মাদরাসা ও একটি প্রাইমারি স্কুল, পুলিশ ফাঁড়ি, বাজারসহ গ্রামের যুব সমাজের খেলার মাঠ, ধান মাড়াই, খড় শুকানোর মাঠ এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। তহশিল অফিসের দুনীতিবাজরা বড় অংকের উৎকোচ পেয়ে কথিত কোটিপতি পরিবারকে ভুমিহীন সাজিয়ে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এসব বন্দোবস্ত বাতিল করে গ্রাম পঞ্চায়েতসহ সর্ব সাধারণের ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সরকারি এ ভূমি উন্মুক্ত করে দেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।
এব্যাপারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষিকা মঞ্জুরানী জানান, তার পিতা মহেশ রঞ্জন কর্তৃক জাহিদপুর মৌজার এক একর ভূমি ২০০১ সালে বন্দোবস্ত আনেন। দুই লাখ টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ওই গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষে ধন মিয়া মহালদারের কাছে বিক্রির বিষয়টি সত্যতা অস্বীকার করেছেন। এব্যাপারে সুজন মিয়া, মফিজ আলী তারা সকলেই ভূমিহীন পরিবার। হাওরে তাদের কোন জায়গা সম্পত্তি নেই। প্রবাসী যারা আছেন তারা পৃথক পরিবারের সদস্য।
এব্যাপারে সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী ধন মিয়া মহালদার জানান, পূর্ব পুরুষদের খেলার মাঠ মহেশ রঞ্জন অন্য ইউনিয়নের বাসিন্দা হয়ে জাহিদপুর পঞ্চায়েতের এক একর জায়গা বন্দোবস্ত নেন। সম্প্রতি দুই লাখ টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে আমরা জায়গা এনেছি এবং আমাদের পঞ্চায়েতের দখলেও আছে। এখানে আমরা মাছ চাষ করেছি। আমাদের গ্রামের একাধিক কোটিপতি স্বচ্ছ পরিবার ভূমিহীন সেজে বন্দোবস্ত শর্ত ভঙ্গ ও তথ্য গোপন করে নতূন করে কিছু সরকারি জায়গা বন্দোবস্ত নেন। ওরা এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। এছাড়া আমাদের অনেক প্রবাসীরা ওই মাঠে ঈদগাহ ও মিনি স্টেডিয়াম স্থাপন করতে আগ্রহী রয়েছে। এব্যাপারে উপজেলা সহকারি (ভুমি) কমিশনার ইসলাম উদ্দিন জানান
কবুলিয়ত শর্ত ভঙ্গ ও তথ্য গোপন করলে বন্দোবস্ত বাতিল করে ভুয়া তথ্যকারিদের বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Helpline - +88 01719305766