নির্বাচনী ভাবনা সিলেট-৩ ।। লিখেছেন সুজাত মনসুর

প্রকাশিত:সোমবার, ০৭ আগ ২০২৩ ০৯:০৮

নির্বাচনী ভাবনা সিলেট-৩ ।। লিখেছেন সুজাত মনসুর

ধীরে ধীরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বর মাসের কোন এক সময় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। প্রতিবারের মতো এবারও বিএনপি সমমনাদের নিয়ে আন্দোলন আন্দোলন খেলার চেষ্টা করছে। বর্তমান সরকারের অধীনে কোন ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা দূরে থাক, নির্বাচন প্রতিহত করার হুংকার দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। যদিও আমরা যেমন জানি, তারাও তেমনি জানে নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা তাদের নেই। মূলত: শেষ পর্যন্ত তারা বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে করবে, তাই সরকারকে চাপে রেখে যতটুকু সম্ভব সুযোগ সুবিধা আদায়ের কৌশল হিসেবে আন্দোলন। নির্বাচন এলেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা দৌড়ঝাপ শুরু করে দেয়। নানারকম নসিহত করে। তাদের ভাবসাব দেখে মনে হয়, আমরা যেন ওদের কোন করদ রাজ্যের নাগরিক। আমাদের বিরোধীদলও ওদের পেছনে সময়টা ব্যয় করে বেশি। কেননা, জনগন ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় তাদের বিশ্বাস নেই। যদিও বাংলাদেশ এখন সে পর্যায়ে নেই বিদেশিরা চাইলেই আমাদেরকে সংবিধান বহির্ভূত নির্বাচন করতে বাধ্য করতে পারবে। যাইহোক বাংলাদেশে যথাসময়ে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায়ই নির্বাচন হবে সেটাই বাস্তবতা।

একজন স্বল্প জ্ঞানী রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসাবে মাঝেমধ্যেই কিছু কিছু পূর্বাভাস কিংবা মতামত দিয়ে থাকি। আমার এ নির্বাচনি ভাবনায় ধারাবাহিকভাবে সিলেট ও সুনামগঞ্জের কিছু আসন কেন্দ্রিক কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন তুলে ধরতে চাই। এটা কোন ভবিষৎ বাণী কিংবা পুর্বাভাস নয়। জানি অনেকেই সে কারনে আমার ওপর নাখোশ হবেন। ভাই বা দাদাদের ভক্তরা গালিগালাজ করবে। তবে সবাইকে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আমার বা অন্য কারো লেখা বা সুপারিশে কারো মনোনয়ন নিশ্চিত হবে না। মনোনয়ন দেবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, যাকে যোগ্য বলে মনে করবেন।

সিলেট-৩ আসন-এর বর্তমান সাংসদ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি, তাঁকে চিনি-জানি কলেজ জীবন থেকে। মায়াবী হাসির অধিকারি হাবিব সবসময়ই আমার একজন কাছের মানুষ, প্রিয় মানুষ, সদা হাস্যময় চেহারার জন্য। তাকে দেখে মনে হয় দু:খবোধ কাকে বলে সে জানেই না। শুধু একবার দেখেছিলাম মলিন চেহারায় লন্ডনে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে ব্যর্থতার কারনে। নিরিবিলি আমাকে তার দু:খবোধ শেয়ার করেছিল এবং জিজ্ঞেস করেছিল এখন সে কি করবে? বলেছিলাম যেভাবে মানুষের পাশে ছিলে সেভাবেই মানুষের পাশে থাকো আর নেত্রীর ওপর ভরসা রেখো, তিনি তোমাকে নিরাশ করবেন না। কভিড আক্রাম্ত হয়ে মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী কয়েস-এর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা হাবিবুর রহমান হাবিবকে সিলেট-৩ আসনে প্রার্থী করেন। তাকে পরাজিত করার জন্য দলের অভ্যন্তর থেকে স্থানীয় পর্যায়ে কম ষড়যন্ত্র হয়নি, কিন্তু হাবিব মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন।

হাবিবুর রহমান হাবিব-এর প্রার্থীতা নিয়ে অনেকেই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এখনো অনেকে প্রকাশ্যে না হলে একান্ত আলাপচারিতায় বিষয়গুলো উত্থাপন করেন। তারা যে মাপকাঠির কথা বলেন তাদের সাথে একমত হতে পারি না। কেননা, আওয়ামী লীগ পরিবারের একজন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী ও জনপ্রতিনিধির সবচেয়ে যে বড় যোগ্যতা তা হাবিব-এর সমমাত্রায় আর কারও নেই। আর সে যোগ্যতা হলো জন সম্পৃক্ততা। সে হচ্ছে সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ। অনেকের মতো মৌসুমি রাজনীতিবদ নয়। নির্বাচন আসলেই ডালা সাজিয়ে বসে গেলাম আর জনগণ তা ভরে দিল তা কিন্তু নয়। অথবা প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত-এর ভাষায় বলা যায়, “মনোনয়ন কেচকি মাছের ভাগা নয়, বাজারে আসলেন আর কিনে নিয়ে গিলেন।”

হাবিব দেশীয় রাজনীতিতে পুনরায় যুক্ত হওয়ার জন্য বিলেত পর্বের সমাপ্তি টেনেছিলেন প্রায় এক যুগেরও অধিক সময় আগে। আমার জানামতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মনোনয়ন চেয়ে সফল হতে পারেনি। তারপরও মৌসুমি প্রার্থীদের মতো এলাকা ছেড়ে যায়নি। সুখে-দুঃখে সাধ্যমত পাশে দাড়িয়েছে। এভাবেই সে মানুষের ভালোবাসা, বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করেছে। সাংসদ হাবিবুর রহমান হাবিব-এর আরেকটি বিশেষ গুণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাহলো মাঝেমধ্যেই দেশ থেকে ফোন করে কুশলাদি জানতে চাওয়া। পারিবারিক কারনে সংক্ষিপ্ত সফরে লন্ডন আসলে একবারের জন্য হলেও ফোন করে খোঁজ নেওয়া। এবং ফোন শুধু আমাকে নয় পরাজিত অনেককেই করেন। অতীত রোমন্থন করে প্রকাশ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। যা সাধারণত কোন জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনৈতিক নেতা অথবা হঠাৎ সম্পদশালী ও হোমরাচোমরা হওয়া কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় না। বরং অতীত ভুলে যাওয়া যেন এক ধরনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়ে গেছে ইদানিং।

সিলেট-৩ নির্বাচনী এলাকায় আরও যারা মনোনয়ন প্রত্যাশি তাদের কেউ কেউ আমার শ্রদ্ধেয় অগ্রজ। আবার কেউ কেউ অনুজ। সবার সাথেই আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সম্পর্ক। সুতরাং তাদের ব্যাপারে কোন ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়। সবার জন্য শুভকামনা।