শুক্রবার বিকেলে সিলেট নগরীর একটি অভিযাত হোটেলের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র মিডিয়া সেল এর উদ্যোগে ‘জবাবদিহীতা মুলক রাষ্ট্র গঠনে অবাধ, নিরপেক্ষ, নির্বাচনত্তোর একটি জাতীয় সরকার এবং দ্বিকক্ষ সংসদ অপরিহার্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, সকলের সম্মিলত আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দেশে যখন জনগনের সরকার প্রতিষ্টা হবে তখন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল দলকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্টা করার জন্য দেশনাশক তারেক রহমান একটি রুপরেখা দিয়েছেন। এই রুপরেখায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ করার যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা বাস্তবান হলে দেশে যেমন সুশাসন নিশ্চিত হবে তেমনি দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে। এজন্য দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সহ সর্বস্থরের মানুষকে এর সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। জবাবদিহিতামুলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। তাই আমরা একটি জবাবদিহিমুলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এনি।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন- সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পিপি এডভোকেট এমদাদ উল্লাহ মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম শাহীন, সুজন সিলেট চাপ্টারের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, ড্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. শামিমুর রহমান, শাবির সাদাদল শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম, ইউট্যাবের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাবির শিক্ষক প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ ইকবাল, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিদ্দিকুর ইসলাম, সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজ, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিলেট জেলার সভাপতি এডভোকেট আনসার খান, বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. শিব্বির আহমেদ শিবলী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, এডভোকেট আশিক উদ্দিন, এডভোকেট আবুল ফজল, কবি সালেহ আহমদ খসরু।
মতবিনিময় সভার মুল বক্তব্যে মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এনি বলেন, দলীয় সরকারের অধিনে কোনভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন যে সম্ভব নয় তা গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির মধ্যদিয়ে আজ দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীর কাছে একটি সর্বজন স্বীকৃত সত্য। তাই গণআন্দোলনে ফ্যাসিবাদ পতনের পর কেবলমাত্র একটি সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও রাষ্ট্রের রুটিন কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যেই গঠিত হতে পারে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার। জনগন তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে আজ উন্মুখ হয়ে আছে। গণমানুষের এই প্রত্যাশাকে দীর্ঘমেয়াদে অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই। তাই এই অবৈধ দখলদারদের হটিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের মাঝে নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে গণতান্ত্রিক শক্তির বিজয়ের পর জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠনের সুস্পষ্ট অঙ্গীকারই আজ সময়ের দাবী। এর বাহিরে ভিন্ন প্রক্রিয়া জনগণ গ্রহণ করবে না।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রস্তাবিত রাষ্ট্র-রুপান্তরমূলক সংষ্কারের পথ-নকশার আরেকটি অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে, বিদ্যমান সংসদীয় ব্যাবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের প্রতিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ ব্যাক্তিদের নিয়ে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার ঘোষনা। পৃথিবীর উন্নত ও অনুসরণযোগ্য অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রচলন আছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি বলেন, একজন রাজনীতিবিদ নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করেন আর একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক চিন্তা করেন আগামী ১০০ বছরে দেশ কেথায় নিয়ে যাবেন। দেশনায়ক তারেক রহমান আগামী ১০০ বছর পর দেশকে কোথায় নিয়ে যাবেন সেই চিন্তা করছেন। কিন্তু তারেক রহমানের দুর্ভাগ্য যে, আওয়ামীলীগের মত একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হচ্ছে, যে আওয়ামীলীগের হাতে ১৯৭৩ সালেই গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে। শহীদ জিয়া যেমন দেশকে কয়েকশত বছর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন দেশনায়ক তারেক রহমানও সেই চিন্তা করছেন। গত ১০ বছরে দেশের মারাত্মকভাবে সমাজিক মূল্যবোধ হারিয়েছে। এখন রাষ্ট্র মেরামত প্রয়োজন। কিন্তু বিএনপি বিশ্বাস করে তাদের পক্ষে একা এ কাজটি করা সম্ভব নয়। এজন্য বিএনপি একটি জাতীয় সরকার গঠন করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ হলে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ স্বচ্ছতার সাথে কাজ করতে পারবে। গত ১৩ বছরের একনায়কতন্ত্রকে ভাঙতেই দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ খুবই জরুরী। আগামীর রাষ্টনায়ক তারেক রহমান দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করেই দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব করেছে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও এদেশের মানুষকে বাক স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধংস করে দিয়েছে সরকার। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে, এটা বিশ্ব স্বীকৃত। ক্ষমতা লোভী সরকার দেশকে অকার্যকর অবস্থায় নিয়ে গেছে। বাক স্বাধীনতার জন্য আইসিটি আইন এখন একটি বড় বাধা। কুইক রেন্টালকে বৈধতা দিয়ে লুটপাটকে বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এই মুহূর্তে দেশে একটি জাতীয় সরকার অপরিহার্য। দেশে আজ গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার নেই। এখন দিনের ভোট রাতে হয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিকদের দমনের আইসিটি আইনের যে বিতর্কিত ৫৭ ধারাটি করা হয়েছে দেশে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চালু থাকলে তা করা সম্ভব হত না। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা সহ যে রাষ্ট্রচিন্তা করেছেন তার কোন বিকল্প নেই।
ড্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. শামিমুর রহমান বলেন, আমারা গত ১৫ বছরে দেখলাম একজন প্রধানমন্ত্রী কিভাবে স্বৈরাচারী হন, কিভাবে একজন নোবেলজয়ীকে বলেন টুস করে ফেলে দেব? দেশে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ হলে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে। দেশে যে একটা চুড়ান্ত সংগ্রাম আসছে, সেখানে যারা অংশগ্রহণ করবেন তাদের নিয়ে বিএনপি যে জাতীয় সরকারের রুপরেখা তৈরি করেছে তা বিএনপির উধারতা। দেশের যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে তার জন্য এবং দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় সরকার অপরিহার্য।
শাবির সাদা দল শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, একটি উন্নত দেশের চেহারা কেমন হতে পারে প্রাথমিক ধারনা আজকের সূচনা বক্তব্যে দেয়া হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গত ২৮শে মার্চ জাতির সামনে দেশকে নিয়ে যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ তো হবে নির্বাচনের পরে। কিন্তু এই মুহুর্তে দেশে কিভাবে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে তা নিয়ে ভাবতে হবে। তারেক রহমান সুস্পষ্ট বলেছেন, বিএনপি নির্বাচিত হলে যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছেন নির্বাচনে তারা জয়ী হোন বা নাহোন সবাইকে নিয়েই জাতীয় সরকার গঠিত হবে। এটি অত্যন্ত বড় মনের পরিচয়।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পিপি এডভোকেট এমদাদ উল্লাহ মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম শাহীন, দেশের সংবিধানের এক কেন্দ্রিক ব্যবস্থাকে রেখেই আমরা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট যে সংসদ ব্যবস্থা করতে চাচ্ছেন। ভারতে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা চালু করলেও তারা তা পুরোপুরি কার্যকর করতে পারে নি। সিলেটের ৫টি মহকুমা ছিল এর মধ্যে দেশ ভাগের সময় আমাদের একটি মহকুমা ভারতে চলে গেল। ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাংলাদেশের সংবিধান এখন পর্যন্ত ১৭ বার সংশোধন হলো। সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন করে দেয়া হলো। কিন্তু আজকে বিচার বিভাগ কোন অবস্থায় আছে? নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন কোন কিছুই প্রফার কাজ করছে না। ক্ষমতা হস্তান্তর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করারই এখন প্রধান জাতীয় সংকট।
সুজন, সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কেন দাবী আদায় করতে হলে সংগঠিত ও স্বোচ্ছার জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন। দাবী আদায় করতে হলে বিএনপির স্পীড বাড়াতে হবে। সোনিয়া গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন কিন্তু মনমোহন সিংহকে প্রধানমন্ত্রী করেছিছেন। আমাদেরকে পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। চারজন মেয়রকে যখন মর্যাদা দেয়া হলো, কিন্তু সিলেটের মেয়রকে মর্যাদা দেয়া হলো না, তখন তো বিএনপি প্রতিবাদ করল না। আমি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে এর প্রতিবাদ করেছি। এসব বিষয় নিয়ে আপনাদেরকে স্বেচ্ছার হতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বার বার শপথ ভঙ্গ করেছেন, এটি খুবই দুঃখজনক।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিদ্দিকুর ইসলাম, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কনসেপ্টটি আজ নতুন কিছু নয়। ১৯৪৩ সালে ভারতবর্ষে বিভিন্ন এলাকাশ বিভিন্ন জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল। জাতীয় সংকট মোকাবেলা করার জন্যই জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা আসে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতে এটি এখন খুবই অপরিহার্য।
এসময় উপিস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও ড. এনামুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকী, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ প্রমূখ।