ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন শাবি ছাত্র বুলবুল

প্রকাশিত:বুধবার, ২৭ জুলা ২০২২ ০৬:০৭

ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন শাবি ছাত্র বুলবুল

সুরমাভিউ:-  সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী মো. বুলবুল আহমেদ (২২) ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- টিলাগাঁওয়ের মো. গোলাব আহমদের ছেলে কামরুল আহমদ (২৯), একই গ্রামের প্রয়াত তছির আলীর ছেলে মো. হাসান (১৯) ও আনিছ আলীর ছেলে মো. আবুল হোসেন (১৯)।

সংবাদ সম্মেলনে আজবাহার আলী শেখ বলেন, ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে অভিযানে নামে পুলিশ। অভিযানে তিনজনকে আটক করা হয়। তাদেরকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদে মো. আবুল হোসেন খুনের ঘটনায় জড়িত বলে স্বীকার করে। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরো দুজনের নাম প্রকাশ করেন।

তার তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ কামরুল আহমদ ও মো. হাসান নামে আরো দুই ছিনতাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতারের পর তারাও স্বীকারোক্তি দেয়। পরে কামরুলের বাড়ি থেকে বুলবুলের মুঠোফোন ও খুনে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্তে আমরা জেনেছি, ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ঘটেছে। শাবির গাজীকালু টিলা এলাকায় সোমবার অবস্থান করছিলেন আবুল হোসেনসহ চারজন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দুজন চলে যায়। সন্ধ্যার পর বাকি দুজনের সঙ্গে যোগ দেয় কামরুল।

এদিন সন্ধ্যার পর গাজীকালু এলাকায় ঘুরতে যান শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ ও মার্জিয়া ঊর্মি। ওই এলাকা নির্জন। তাদেরকে সেখানে পেয়ে তিন ছিনতাইকারীরা মুঠোফোন ও টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে বুলবুলের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন তারা বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করে।’

ছিনতাইকারীরা বুলবুলের মানিব্যাগ ও ঊর্মির মুঠোফোন, ব্যাগ কেন নেয়নি এমন প্রশ্নে আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘ঊর্মিকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে বলেছে, ঘটনার সময় বুলবুলের কাছ থেকে সে একটু দূরে সরে গিয়েছিল। বুলবুলের মানিব্যাগও খোয়া যায়নি। গ্রেপ্তাররা বলেছে, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতের পর রক্ত দেখে তারা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।’

ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে ঊর্মির চলে যাওয়া ও কললিস্ট মুছে ফেলার বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্কের কারণে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘ঊর্মি হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাকে পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, সে জানতে পারে নিহত বুলবুলের জানাজা ক্যাম্পাসে হবে। জানাজায় শরিক হতে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসে। তার চলে আসার পেছনে অপরাশের কোনো কিছু পাওয়া যায়নি।’

‘আমরা ঊর্মির মুঠোফোন ও কললিস্ট চেক করে দেখেছি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। তার মোবাইলে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি।’

এদিকে, ঘটনার পর যে তিনজনকে আটক করা হয়েছিল, তন্মধ্যে আবুল হোসেন স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাকি দুজনকে এখনও পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং তাদেরকে অভিভাবকদের জিম্মায় প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে গাজীকালুর টিলার পাশে ছুরিকাঘাত করা হয় শাবির লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদকে (২২)। তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বুলবুলের বাড়ি নরসিংদী সদরের নন্দীপাড়া গ্রামে। তিনি শাবির শাহপরান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় গতকাল মঙ্গলবার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক

আখতারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ