ছাতকে বানভাসি এলাকায় শুকনো খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির ও জ্বালনির তীব্র সঙ্কটে লাখো পানিবন্দী মানুষ

প্রকাশিত:রবিবার, ১৯ জুন ২০২২ ০৮:০৬

ছাতকে বানভাসি এলাকায় শুকনো খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির ও জ্বালনির তীব্র সঙ্কটে লাখো পানিবন্দী মানুষ

হাসান আহমদ, ছাতক:-  সুনামগঞ্জের ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে ছাতক ‘পুরো দেশের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এই উপজেলা। এসব এলাকার অনেক স্থানেই বাড়ি-ঘর আর স্কুল-কলেজ তো বটেই, মহাসড়ক আর রেললাইনও তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। ভেঙ্গে গেছে অনেক কাঁচাবাড়িঘর।

বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় কয়েক লাখ মানুষ গত পাঁচ দিন থেকে ভয়াবহ বন্যার পানিতে ভাসছে। কেউই ত্রাণ নিয়ে আসছে না। বসতঘরে পানি থাকায় চুলায় আগুন জ্বালানোর মতো পরিস্থিতি নেই। শিশু খাদ্যেরও তীব্র সংকট রয়েছে।

না খেয়ে আছেন লাখো মানুষ, এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলেও ছাতকে কোন উদ্ধার অভিযান এখন পর্যন্ত কোন এলাকায় উদ্ধার করা হয়নি! এবং কোন ধরনের সরকারী ত্রান পৌছায়নি! মানুষ এখনোও ঘরবাড়িতে পানিবন্ধি রয়েছে মানুষ! বাঁচার জন্য মানুষের আকুতি, আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ না খেয়ে আছেন!

বন্যায় তলিয়ে গেছে এখানের ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বহু পাকা রাস্তাঘাট, প্লাবিত হয়েছে হাজার ঘরবাড়ি, দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শতাধিক মৎস্য খামার। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক, সুনামগঞ্জ সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।

বসত ভিটা বানের পানির নিচে। প্রাণ বাঁচাতে মানুষজন ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্র কিংবা বাসাবাড়ির ছাদে। চারদিকে পানি আর পানি। তারপরও খাওয়ার মতো বিশুদ্ধ পানির জন্য চলছে হাহাকার। নেই সেনিটেশন ব্যবস্থা। আর খাদ্য সংকটও চরমে।

মানুষের মতো দুর্ভোগে পড়েছে গবাদি পশুও। বন্যাকবলিতরা অন্তহীন দুর্ভোগে চরম অসহায়। সব কেড়ে নিয়েছে আকস্মিক বন্যা। সহায় সম্বল হারিয়ে এখন তারা নিঃস্ব। গ্রামের পর গ্রাম গ্রাস করেছে বানের পানি।

ভারি বর্ষণ ও সীমান্ত এলাকা মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্যের মরাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। প্লাবিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে জ্বর, আমাশয়, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ।

বানভাসিরা রোগে-শোকে ভুগলেও দুর্গত এলাকায় এখনো মেডিকেল টিম পৌঁছেনি। শ্রমজীবী মানুষরা খাবার সংগ্রহ করতে না পারায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দেওয়ায় গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

স্থানীয়রা বলছেন, অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে দিন-রাত অতিবাহিত করছেন। বন্যাকবলিত প্রায় কয়েক লাখ মানুষের মাঝে এই ত্রাণসামগ্রী খুবই অপ্রতুল। পাচদিন ধ‌রে না খেয়েই আছেন অনেকেই, তাদের খবর কেউ নেয়‌নি। মেম্বর-চেয়ারম্যানরা কেউ হামার খোঁজ না নেয়নি। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন লোকজন। কিন্তু সরকারিভাবে বানভাসি মানুষের মাঝে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পৌছায়নি। তীব্র খাদ্য সংকটে এসব দুর্গত মানুষের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। সেই সঙ্গে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরকারিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশ্রয় কেন্দ্রে নাম মাত্র  ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে কিন্তুু সব জায়গায় নয়। উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়া কিংবা বন্যায় পানিতে আটকে পড়া মানুষ ত্রাণ পাচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমানের মোবাইলে বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ