ছাতকে ৪র্থ দফা বন‌্যায় প্লা‌বিত ২ লক্ষা‌ধিক মানুষ পা‌নি ব‌ন্ধি, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

প্রকাশিত:বুধবার, ১৫ জুন ২০২২ ০৮:০৬

ছাতকে ৪র্থ দফা বন‌্যায় প্লা‌বিত ২ লক্ষা‌ধিক মানুষ পা‌নি ব‌ন্ধি, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

হাসান, ছাতক (সুনামগঞ্জ)প্রতি‌নিধি:-  সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় ৪র্থ দফায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে ফের উপ‌জেলার ১৩‌টি ইউ‌পি ১‌টি পৌর সভাসহ বুধবার পর্যন্ত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বন্যায় তলিয়ে গেছে এখানের বহু পাকা রাস্তাঘাট, প্লাবিত হয়েছে হাজারও ঘরবাড়ি, দুই শতা‌ধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শতা‌ধিক মৎস্য খামার। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ।

প্রবল বৃ‌ষ্টি বর্ষণ মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের বন‌্যায় ছাতকে ১৩‌টি ইউ‌পি এক‌টি পৌরসভা সহ মোট ৩শতা‌ধিক গ্রাম,দুইশতা‌ধিক প্রাথ‌মিক, ও শতা‌ধিক মাধ‌্যমিক, মাদ্রাসা শিক্ষা বন‌্যার পা‌নিতে টুকেছে। সুরমা নদীর পা‌নি হু হু করে বাড়ছে।

গত বুধবার দুপুর থেকে ছাতক উপ‌জেলার সঙ্গে সারাদেশে সড়ক যোগা‌যোগ বন্ধ গেছে। ২ লক্ষা‌ধিক মানুষ পা‌নি ব‌ন্ধি হয়ে পড়েছে। ৪‌টি আশ্রয় কেন্দ্রে শতা‌ধিক মানুষ অবস্থান নিচ্ছেন বলে ইউএনও এ ঘটনার সত‌্যতা নি‌শ্চিত করেছেন।

রাস্তা ঘাট,বা‌ড়ি ঘরে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পা‌নিতে তলিয়ে গেছে বেরাজপুর, নোয়াপাড়া, আলমপুর, বিলপার, দশঘর, কৃঞ্চনগর, আনন্দনগর, বাগইন,লক্ষীপুর, গো‌বিন্দনগর, মোহনপুর, ত‌কিপুর সরকা‌রি প্রাথ‌মিক বিদ‌্যাল‌য়সহ শতা‌ধিক শিক্ষা প্রতিষ্টানে পা‌নি টুকেছে বলে শিক্ষক ও শি‌ক্ষিকারা জা‌নিয়েছেন।

জানায়ায়, গো‌বিন্দগঞ্জ ও ছাতক ৩ কিলো‌মিটার সড়‌ক এলাকায় তিন ফুট ও চার ফুট পয়ন্ত বন‌্যার পা‌নিতে ত‌‌লিয়ে গেছে সড়ক। উপ‌জেলার সদরের সাথে ইসলামপুর, চরমহল্লা, ভাতগাও, সিংচাপইড়, উত্তরখুরমা, গো‌বিন্দগঞ্জ সৈদেরগাও, ছৈলাআফজলাবাদ, কালারুকা,নোয়ারাই, জাউয়াবাজার, দোলারবাজার, সহ ১৩টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ।

ছাতক-দোয়ারা, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক জাউয়া সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক ইসলামপুর ইউনিয়নের ছনবাড়ি-রতনপুর সড়ক, ছনবাড়ি-গাংপাড়-নোয়াকোট সড়ক,কালারুকা ইউনিয়নরে মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, আমেরতল-ধারণ সড়ক,বুড়াইর গাও-আলমপুর.-দাহারগাও-আলমপুর, তাজপুর-নুরুল্লাহপুর, গোবিন্দনগর-দশঘর, পালপুর-সিংচাপইড় সড়ক, ভুইগাঁও,  বোকারভাঙ্গা- মানিকগঞ্জ সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের একাধিক অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। শতা‌ধিক স্টোন ক্রাসার মিল, পোল্ট্রি ফার্ম ও মৎস্য খামারে বন্যার পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শাক-সবজির বাগানেও পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হ‌চ্ছে।

এ‌দিকে বেরাজপুর সরকা‌রি প্রাথ‌মিক বিদ‌্যালয়ের প্রধান মা‌নিক মিয়া জানান, তার বিদ‌্যালয় পা‌নি টুকে মুল‌্যবান কাগজ পত্র বই সহ পা‌নিতে ডুবে গেছে। নৌকা দিয়ে বিদ‌্যালয়ে কাগজপত্র উপর তোলা হয়।

গত বুধবার দুপু‌রে পর্যন্ত ছাতকে সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদী সহ সকল নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি এখানে ব্যাপক আকার ধারণ কর‌ছেন। ইতিমধ্যে বন্যায় তলিয়ে গেছে ৩ শতা‌ধিক গ্রাম, শতা‌ধিক পাকা, দেড় শতা‌ধিক কাচা রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শতা‌ধিক স‌রকা‌রি প্রাথ‌মিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বীজতলা ও শত শত একর উঁচু জমির বোরো ফসল পা‌নিতে ত‌লিয়ে গেছে।

হাটবাজার, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্টান, বেশীভাগ পাড়া মহল্লায় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ‌পৌর শহরের নৌকা চলছে, থানা, উপজেলা প‌রিষদ এলাকার পা‌নি ঢুকে পড়েছে। উজানে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারনে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে ব্যাপক হারে পানিবৃদ্ধি পা‌চ্ছে।
শহরের সকল ক্রাশার মিল বন্ধ। নদীতে কার্গো লোডিং আন লোডিং ও বন্ধ হয়ে পড়েছে । এ‌তে হাজা‌রো শ্রমিকরা এক সপ্তাহ ধরে বেকার হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা-মেঘনা স্টেশন সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।

সরকারিভাবে বানভাসি মানুষের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে বানভাসি আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন ইউএনও।

গবাদি পশুর খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপ‌জেলার বন্যা দুর্গতদের জন্য ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গতদের উপজেলা প্রশাসন থেকে শুকনা খাবার বিতরণ ‌নিয়‌মিত বিতরন করা হচ্ছে। ছাতক সদর পোষ্টা অ‌ফিসে পা‌নি টুকেছে।

এব‌্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, বন্যার্তদের জন্য শহরের ৪‌টি  বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষনা করা হয়। ইতিমধ্যেই এসব আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে প‌রিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে ত্রান সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম ব‌্যাহত চলছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ