২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
প্রকাশিত:সোমবার, ১৩ জুন ২০২২ ১১:০৬
ওয়েছ খছরু;;
সিলেটের ধোপাদীঘি। সবখানেই এখন ব্যাপক আলোচনায়। আগ্রহের কমতি নেই। নতুন করে ওয়াকওয়ে করা হয়েছে। নির্মল পরিবেশে হাঁটবেন সিলেটের মানুষ। ভারত সরকারের অর্থায়নের এই প্রকল্প গত শনিবার ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করা হয়েছিলেন। এসেছিলেন দুই মন্ত্রীও। সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রদূত। কিন্তু ধোপাদীঘির এই ওয়াকওয়ে নিয়ে আড়ালে অনেক কিছুই ঘটে গেছে। সেটি জানতেন না অনেকেই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীই আলোচনায় তুললেন সে প্রসঙ্গ। অভিযোগ করলেন জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও। ধোপাদীঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থান পুরাতন কারাগারের। ওখানে জায়গাও তাদের। কিন্তু ওয়াকওয়ে নির্মাণ নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় বাধা প্রদান করেছে বলে মন্ত্রীদের সামনেই অভিযোগ তোলেন মেয়র আরিফ।
এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে সিলেটে আলোচনা চলছে। মানবজমিনের অনুসন্ধানে জানা গেল অনেক কিছু। পুরাতন কারাগারের মূল দেওয়ালের বাইরেও জেল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ভূমি রয়েছে। বৃটিশ আমলে নির্মাণ করা এই কারাগারের মূল যে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে তার বাইরেও ৮ শতকের মতো জমি রয়েছে। ওই ভূমিতে টিনশেডের ঘর ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। এক পাশে ধোপাদীঘি। ফলে দীঘির পশ্চিম অংশ কারাগারের ভূমি বিদ্যমান। প্রায় তিন বছর আগে যখন সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ওয়াকওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় তখন জমি ছাড় দিতে নারাজ কারাগারের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের বক্তব্য হচ্ছে; যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই উদ্যোগ নিতে হবে। মেয়র আরিফও সেদিকে হাঁটলেন।
তিনি ধোপাদীঘির সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সহযোগিতা চাইলেন। তখন কারা কর্তৃপক্ষ সৌন্দর্যের স্বার্থে তাদের ঘর অন্যত্র স্থানান্তরের সায় দেন। একইসঙ্গে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও অন্যত্র ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। তবে- ওই জমি সিটি করপোরেশনকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়নি। গত শনিবার মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সহযোগিতা চেয়ে অভিযোগ করে জানান- ‘আপনারা দেখেছেন ওয়াকওয়ে নির্মাণের আগে ধোপাদীঘির কী অবস্থা ছিল। জেল কর্তৃপক্ষ আমাদের বার বার অসহযোগিতা করেছে। দৃষ্টিনন্দন এনভায়রনমেন্টের জন্য আমরা তাদেরকে অন্য জায়গায় ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। এই জায়গাটা জেল বাউন্ডারির বাইরে।
সাবেক জেলা প্রশাসক এসে এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সুবিধা করে দিয়েছিলেন। এখন কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। দুই মন্ত্রী যেহেতু আসবেন সে কারণে অস্থায়ী রাস্তার জন্য বালু ফেলতে চেয়েছিলাম। সেখানেও বাধা দেয়া হয়েছে।’ মেয়র আরিফ জানান- ‘আমি মনে করি সেটা সিলেটবাসীর অনুভূতির ওপর আঘাত করা হয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী নিজেও এসে বলেছিলেন তোমরা এটা করো। এটা আমার প্রাণের দাবি। সিলেটবাসীর দাবি। এটা আমি পিএমএ’র কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। তিনি বিষয়টি মন্ত্রীদের সামনে উপস্থাপন করে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।’ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনও ধোপাদীঘি নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করে। একইসঙ্গে পুরাতন কারাগার নিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বপ্নের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন- ‘পুরাতন কারাগার নিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রীর একটি স্বপ্ন ছিল। এই কারাগার বৃটিশ আমলে তৈরি করা হয়েছিল। বৃটিশরা তখন শহরের মধ্যখানে কারাগার নির্মাণ করে।
বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে এই কারাগারে রাখা হয়েছিল। আমরা সেখানে জাদুঘর করতে চাই। সাবেক অর্থমন্ত্রী চেয়েছিলেন পুরাতন জেলটাকে ভেঙে সুন্দর একটি উদ্যান নির্মাণ হবে। আমরা আশা করি এখানে কখনো উদ্যান হবে। একনেকেও বিষয়টি পাস হয়েছিল। এটা নিয়ে এখন আবার চিন্তা করা হবে।’ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতের পক্ষ থেকে সিলেট উন্নয়ন সম্বলিত সর্বশেষ প্রস্তাবনার প্রসঙ্গও জানান। তিনি বলেন- ‘সাবেক অর্থমন্ত্রী গত মার্চ মাসে শেষবারের জন্য যখন সিলেটে এলেন তখন মেয়র তাকে শুধু সংবর্ধনাই দেননি; তাকে দিয়ে সিলেট উন্নয়নের একটি প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। এবং সেটা যখন পরবর্তীতে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাই, প্রধানমন্ত্রী তখন তাৎক্ষণিক সেগুলোর অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন।’ এদিকে- ওই অনুষ্ঠানে সিলেটের বর্তমান ডিআইজি প্রিজন (ভারপ্রাপ্ত) কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তবে- বিষয়টি নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা তোলেননি।
গতকাল বিকালে সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন। জানান- ‘জেলের জায়গা, ধোপাদীঘি সবই তো সরকারি জায়গা। দুই মন্ত্রণালয়ের ভূমি। কাজ কিংবা ব্যবহারের জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয়। আমরা চাইলেও জায়গা হস্তান্তর করতে পারি না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জায়গা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে প্রক্রিয়াগতভাবে হস্তান্তর করা হলে তো কোনো আপত্তি থাকবে না। আর উদ্বোধনের দিনের জন্য অনুমতি তো দেয়া হয়েছে। দুই মন্ত্রী উদ্বোধনে আসার খবরটি জানার পর এ ব্যাপারে আইজি প্রিজনের সঙ্গে কথা বলে একদিনের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেখানে তো বাধা দেয়া হয়নি।’ তিনি জানান- ‘ওয়াকওয়ে থেকে দেওয়াল পর্যন্ত ৮ কিংবা ১০ ডিসিমিল জমি যাই থাকুক সেগুলো আমরা দেওয়াল তুলে আলাদা করে দেবো। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে অনুমোদন পাওয়া গেছে’।
অফিস :ইস্ট এন্ড, তালতলা ,সিলেট-৩১০০, বাংলাদেশ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এমদাদুল হক
বার্তা সম্পাদকঃ আবু জাবের
মোবাইলঃ ০১৭১১৩৩১০৭০
ইমেইলঃ surmaview24@gmail.com
Helpline - +88 01719305766