ছাতক প্রতিনিধি:- ছাতকে চলতি মৌসুমেও লিচুর আশানুরূপ ফলন হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এখানে লিচুর বাম্পার ফলন হয়ে আসছে। বর্তমানে লিচু বাগানের গাছে-গাছে ঝুলছে মৌসুমী রসালো ফল পাকা লিচু। চলতি মৌসুমে এখানকার চাষীরা লিচু বিক্রি করে লক্ষ-লক্ষ টাকা আয় করবেন বলে জানান একাধিক লিচু চাষী। গত কয়েকদিন ধরে ছাতক-দোয়ারাবাজারসহ স্থানীয় হাট বাজারে এই অঞ্চলের লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ছাতকসহ বিভিন্ন হাটে এখানের উৎপাদিত কয়েক লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি হয়। ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর, গোদাবাড়ী, চাঁনপুর, বড়গল্লা, রাজারগাঁও এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার লামাসানিয়া, পরমেশ্বরীপুর ও টেংরাটিলায় রয়েছে লিচুর বাগান। এই অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ করা হয়। এখানের উৎপাদিত লিচু আকারে ছোট হলেও এ লিচু খুবই মিষ্ট।
লিচু চাষী গোদাবাড়ী গ্রামের আব্দুল কাদির, রাজারগাঁও গ্রামের আব্দুল মানিক, চাঁনপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়া, মানিকপুর গ্রামের আরব আলী ও লামাসানিয়া গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, লাভজনক লিচু চাষের সাথে জড়িয়ে তারাসহ এখানের অর্ধশত লিচু চাষী এখন স্বাবলম্বী। লিচুর বাজারমূল্য সব সময়ই ভালো থাকে। চলতি মৌসুমেও লিচুর ফলন আশানুরূপ হয়েছে।
ছাতক শহর থেকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে ৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে টিলা বেষ্টিত চৌমুহনী বাজার ও লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত মানিকপুর গ্রাম। একটু এগুলেই দোয়ারাবাজারের লামাসানিয়া গ্রাম। এসব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুর গাছ। বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করেছেন এলাকার অর্ধশত পরিবার। বর্তমান সময়ে ছাতক-দোয়ারাবাজারের এই এলাকার বাগানগুলোতে দেশীয় জাতের পাকা রসালো ফল লিচুর ছড়া গাছে-গাছে ঝুকে রয়েছে। যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। লিচু বাগান দেখতে আসা এখানে দর্শনার্থীদের ভীড়ও কম নয়। লিচুর বাগান ও লিচুর চাষ নিয়ে একটি গল্পও রয়েছে এখানের মানুষের মুখে-মুখে। ব্রিটিশ জমিদার আমল থেকেই নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর ও আশপাশ এলাকার টিলাভূমিতে লিচু চাষ শুরু হয়। তবে তা বানিজ্যিকভাবে ছিলো না। ১৮/২০ বছর ধরে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরি করে লিচুর চাষ করা হচ্ছে। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন-দিন এর পরিধি বেড়েই চলছে।
স্থানীয়রা জানান, ব্রিটিশ আমলে গৌরীপুরের জমিদার হরিপদ রায় চৌধুরী ও তার ভাই শান্তিপদ রায় চৌধুরীর কাছারিবাড়ি ছিলো মানিকপুর গ্রামে। এই কাছারি বাড়িতে জমিদারের লোকজন কয়েকটি লিচুগাছ রোপন করেছিলো। কাছারিবাড়িতে শতবর্ষী তিনটি লিচু গাছ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। জমিদারের এই কাছারিবাড়িতে বর্তমানে গ্রামবাসীরা জামে মসজিদ নির্মাণ করেছেন। মূলত ওই কাছারিবাড়ি থেকেই গ্রামজুড়ে লিচুর গাছ ও লিচুর চাষ ছড়িয়ে পড়েছিলো। গত ক’বছর ধরে উপজেলা কৃষি বিভাগও লিচু চাষে লোকজনকে উৎসাহী করছে এবং বিদেশী লিচুর চারা চাষীদের মাঝে বিতরণসহ বিভিন্নভাবে সরকারী সহযোগিতা করে যাচ্ছে। স্থানীয়রা আরো জানান, ছাতক-দোয়ারাবাজারের লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাট-বাজারে বিক্রির জন্য খুব কম পাঠানো হয়। তবে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এর চাহিদা রয়েছে। এই অঞ্চলের উৎপাদিত লিচু দিয়েই ছাতক-দোয়ারাবাজারের মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান ও দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ জানান, লিচু চাষীদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা। অনেককে লিচু চাষে উদ্যোগী করা হয়েছে। তাদের সরকারী সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। চাষীরাও পাচ্ছেন ভালো বাজার মূল্য। টিলা বেষ্টিত এ অঞ্চল লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে লিচুর বাগান করতে আগ্রহীদের সরকারি সকল সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানান এ দু’কর্মকর্তা।