১৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০২২ ০৯:০৩
শায়খ ইসহাক আল মাদানি:- সহীহ হাদিস মোতাবিক তারাবীহ নামায ২০ রাকাত আর তাহাজ্জুদের নামায ৮ রাকাত। তাহাজ্জুদের নামায সম্বলিত সহীহ হাদিসগুলোকে অপব্যাখ্যা দিয়ে তারাবীহ নামায না বানানোর অনুরোধ করছি।
বিশুদ্ধ পানির একটি গ্লাস এবং খাটি দুধের একটি গ্লাসকে পৃথক পৃথক রাখলে পানিও বিশুদ্ধ থাকবে এবং দুধও খাটি থাকবে।পানির গ্লাসকে দুধের গ্লাসের সাথে মিশিয়ে দিলে পানিও বিশুদ্ধ থাকবে না আর দুধও খাটি থাকবেনা।আপনারা তারাবীহকে ৮ রাকাত বলে তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ উভয় নামাযের মূল স্পীড নষ্ট না করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
১৯৭৮-১৯৮৩ সাল পর্যন্ত আমি ইসহাক আল মাদানী মক্কা ও মদিনার হারামাইন শরীফের তারাবীহর নামায দেখেছি ও পড়েছি।
হারামাইন শরীফে হযরত উমর(রাঃ) এর শাসনকাল থেকে আজ (১৪৪৩হিজরী অবধি) তারাবীহ নামায ২০ রাকাত চলছে।
মক্কা শরীফের ইমাম শায়খ শুরাইম (দা বা) ও শায়খ সুদাইস(দা বা) তারাবীহ নামায ২০ রাকাত পরস্পরে ভাগ করে আদায় করতেন।এখনও ২০ রাকাত নামায আদায় হচ্ছে।মদীনা মসজিদের বর্তমান প্রধান ইমাম ও খতীব আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ শায়খ ক্বারী ড.আলী বিন আব্দুর রহমান আল হুযায়ফী(দা বা) মসজিদে নববীতে এখনও ২০ রাকাত তারাবীহ আদায় করে যাচ্ছেন।
আমি মদীনা শরীফে থাকা অবস্থায় সালাফী বড় বড় আলিম-উলামা যেমন-সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি শায়খ আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায(রহঃ),শায়খ আব্দুল আযী্য রাবীয়ান (রহ:),আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ শায়খ ড. আব্দুল মুহসিন বিন হামদ আল আব্বাদ ,শায়খ আবু বকর জাবের আল যাযায়েরী,শায়খ উমর ফালাতা,শায়খ আব্দুল কাদীর শায়বাতুল হামদ,শায়খ আত্বীয়া খামিস এবং মক্কা শরীফের দীর্ঘকালীন ইমাম ও খতিব শায়খ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিন সুবায়েল (রহ) সাহেবদের কে রামজানে হারামাইন শরীফে ২০ রাকাত তারাবীহ নামায আদায় করতে দেখেছি।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে-
ঐ সকল খ্যাতিমান উলামা মাশায়েখ কি বুখারী শরীফের আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত সহীহ হাদিসটি জানতেন না?
তারাও কি ২০ রাকাত তারাবীহ নামায পড়ে বেদয়াত করেছেন?
মিশরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় তারাবীহ নামায ২০ রাকাত
আদায় হচ্ছে।
এ দুটি বড় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারগণ কি এসব সহীহ হাদিসের আসল মর্ম বুঝেন নি?
ইন্দোনেশিয়া ,মালয়েশিয়া,পাকিস্থান এমনকি বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তারাবীহ নামায ২০ রাকাত আদায় করছেন।এই সকল ইসলামী দেশের আলিম উলামা কি আপনাদের ৮ রাকাতের স্বপক্ষে উপস্থাপিত সহীহ হাদিসগুলো জানেন নি?
রাসূল (সা:) ৬ লাখ সাহাবী রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন।উমর (রা:) ,উসমান (রা:),আলী (রা:),খোলাফায়ে রাশিদ্বীনের অন্যতম ব্যক্তিবর্গ যে আমল টি জামাতে আদায় করলেন সেই আমলটি কোন উসূলে বেদয়াত হবে আমার তা জানা নেই। এটা যদি বেদয়াত হয়ে থাকে তাহলে লক্ষাধিক সাহাবী জীবিত থাকা অবস্থায় একজন সাহাবীও কি বেদয়াত এর বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস করেন নি।এটা কি কোনো বিবেকবান মানুষ বিশ্বাস করতে পারে?
সালাফী মাদানী ভাইগন
আপনাদের ভাষ্যমতে ৮ রাকাত তারাবীহ এর শতাধিক সহীহ হাদিস আছে।তাহলে এ সকল হাদিসের আমল ছেড়ে দিয়ে কোন দলীলাদির ভিত্তিতে ইমাম আবু হানিফা (রহ:),ইমাম মালিক (রহ:),ইমাম শাফিয়ী(রহ:),ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ),ইমাম সুফিয়ান সওরী (রহ:) সহ তাবেয়ী ও তবে-তাবেয়ীনদের শত শত ইমামগন তারাবীহ নামায ২০ রাকাত বললেন।
বুখারী শরীফের আয়েশা (রা:) এর বর্ণিত হাদিসটি যদি আপনারা আক্ষরিকভাবে মেনে থাকেন তাহলে নিম্নের আমলগুলো অবশ্যই করুন।
১- তারাবীহ শুধু রামজানে নয়,পুরো বছর পড়ুন।
২- তারাবীহ সালাত ২ রাকাত করে আদায় না করে একসাথে ৪ রাকাত করে আদায় করুন।
৩-আবু যর (রা:) বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী তারাবিহ সালাত অর্ধেক অথবা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অথবা সেহরি খাওয়ার আগ পর্যন্ত তারাবীহ নামায পড়ুন।
৪-বিতরের নামায ৩ রাকাত স্বীকার করুন।
পারবেন তো এই আমলগুলো করতে?
১.ইজমায়ে সাহাবাকে প্রত্যাখ্যান করে
২.আহলে সালাফের মুতাওয়াতীত আমলকে বেদয়াত বলে
৩.কুরুণে ছালাছার আহলে হাদিসদের ব্যাখ্যাকে অগ্রাহ্য করে
৪.জমহুর ইমামদের রায় কে ছেড়ে দিয়ে নিজদেরকে আহলে সালাফ বা আহলে হাদিস দাবী করা হাস্যকর ব্যাপার।
লাখ লাখ হাদিসের হাফিয হয়েও ইমাম বুখারী(রহ:),ইমাম মুসলিম(রহ:),ইমাম তিরমিযী (রহ:),ইমাম নাসায়ী(রহ:),ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ:) নিজদের কে কখনো আহলে হাদিস দাবী করেন নি।
আসুন আমরা হাদিসের জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করি,হাদিসের উসূল ভালোভাবে অধ্যয়ন করি।মতের খেলাফ হলেই হাদিসকে যায়ীফ বা জাল না বলি।আসুন মুসলিম মিল্লাতকে সালাফে সালেহীন এর তরীকায় সঠিকভাবে রমজানে ক্বিয়ামুল লাইল করতে দেই।সহজ সরল মুসলমানদের বিভ্রান্ত করা থেকে বিরত রাখি।আল্লাহ আমাদের সবাইকে সিরাতে মুসতাকিমের উপর থাকার তাওফিক দিন ।আমীন
লেখক: প্রতিষ্ঠাকালীন শায়খুল হাদীস, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা পাঠানটুলা সিলেট।
অফিস :ইস্ট এন্ড, তালতলা ,সিলেট-৩১০০, বাংলাদেশ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এমদাদুল হক
বার্তা সম্পাদকঃ আবু জাবের
মোবাইলঃ ০১৭১১৩৩১০৭০
ইমেইলঃ surmaview24@gmail.com
Helpline - +88 01719305766