বিশ্বনাথে কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতসহ এন্তার অভিযোগ

প্রকাশিত:শুক্রবার, ০৪ মার্চ ২০২২ ০৬:০৩

বিশ্বনাথে কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতসহ এন্তার অভিযোগ

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি:-  সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের রাগীব-রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. ছিফত আলীর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারি কর্মকান্ডের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত বুধবার (২ মার্চ) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর ওইসমস্ত অভিযোগ লিখিত জানিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন একই প্রতিষ্ঠানের সদ্য সাবেক গভর্ণিং বডির শিক্ষানুরাগী সদস্য ও অডিট কমিটির আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া তালুকদার।

অভিযোগপত্রে গোলাম কিবরিয়া তালুকদার উল্লেখ করেন, রাগীব-রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান ছিফত আলী ২০১১ সালে ১৯ লক্ষ ৯৬ হাজার ৮০৮ টাকা আত্মাসাতের দায়ে বরখাস্ত হন। পরের বছর ফের বরখাস্ত হন স্বেচ্ছাচারিতার দায়ে।

২০১৩ সালে কলেজ শাখার পাঠদানের অনুমতি নিয়ে আসার জন্যে ১৫ লক্ষ টাকা প্রতিষ্ঠান প্রধান, সভাপতি ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার যৌথ অ্যাকাউন্টে জমা রাখেন। কিন্তু পরবর্তী বা বর্তমান সময়ে ওই টাকার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। টাকাগুলো তিনি আত্মসাত করেছেন।

প্রতি বছর কল্যাণ/দরিদ্র তহবিলে প্রায় ৭৫ হাজার ও গ্র্যাচুয়েটি তহবিলে প্রায় ৮০ হাজার টাকা হলেও এই টাকা তিনি উভয় খাতেই ব্যয় করেননি। অনেক শিক্ষক-কর্মচারী অবসরজনিত কারণে বা চাকরী ছেড়ে চলে গেলেও তাদের প্রাপ্য গ্র্যাচুয়েটির টাকা প্রদান করা হয়নি এবং এই খাতের কোনো টাকা জমাও পাওয়া যায়নি।

পরিচালনা কমিটিকে অবহিত না করে বেআইনি ভাবে জমি নামজারি বাবদ তহশিলদারকে ৫০ হাজার টাকা ঘুস দিয়েছেন বলে ক্যাশ বইয়ে লিপিবদ্ধ করেন, সেই ঘুসের টাকার নকল ভাউচারও তৈরী করেন এবং আরও ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তি করেন।

প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী সমীরন মোহন সোমের কাছ থেকে প্রতিমাসে মাসোহারা গ্রহণ করে ২০১৫ সাল থেকে অনুপস্থিত রেখে প্রতিমাসে সরকারি বেতন বিলি ও বেসরকারি বেতন ধারাবাহিকভাবে করে যাচ্ছেন ছিফত আলী।

তিনি সম্প্রতি এলটিআরসির নিয়োগপ্রাপ্ত ভূগোলের প্রভাষককেও বিধিবহির্ভূতভাবে ৬ মাসের ছুটি দিয়ে বদলী শিক্ষক রেখে সরকারি টাকা নষ্ট এবং প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা ও পড়াশোনার মান নষ্ট করছেন।

এ ছাড়াও, কমিটির অনুমোদন ছাড়াই গ্রামীণ ব্যাংক লামাকাজী শাখায় গোপনে অ্যাকাউন্ট খোলে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধ লেনদেন করেন। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ প্রতিষ্ঠানটিতে দান-অনুদান করেন। কিন্তু আত্মাসাতের উদ্দেশ্যে তিনি তার কোনো তথ্য রাখেননি।

কমিটির অনুমতি ছাড়াই তিনি তার পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেতন, ভর্তি ও সেশন ফি লাগামহীনভাবে মওকুফ করে যাচ্ছেন। যে কারণে মওকুফ পাওয়ার যোগ্য শিক্ষার্থীরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং একই কারণে তহবিলেরও ঘাটতি হচ্ছে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে একযোগে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পালন ও শপথ গ্রহণের নির্দেশ দিলেও অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ছিফত আলী শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান করেননি। ১ জানুয়ারি দেশব্যাপী বই উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও ওইদিন তিনি তার প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতই হননি।

ছিফত আলী জাতীয় দিবসসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন না করে তাচ্ছিল্যভাবেই উদযাপন করেন। তার নামে প্রায় ১২ ফৌজদারি মামলা চলমান ছিল। তিনি একাধিকবার হাজত বাসও করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাগীব-রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. ছিফত আলী বলেন, এসব অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রনোদিত। অতীতেও আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। কিন্তু কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি।

রাগীব-রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি ডা. শাহনুর হোসাইন জানান, অভিযোগকারী গোলাম তালুকদার অডিট কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে কখনোই কোনো অডিট রিপোর্ট পেশ করেননি। মাত্র একটি রিপোর্ট পেশ করেছিলেন। যেখানে তিনি সবকিছু ‘ভালো’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

এ বিষয়ে কথা হলে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, এ রকম অনেক অভিযোগ পাই। সেগুলো তদন্তের দায়িত্ব দিই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ