দেখে এলাম কাশফুল বাগান

প্রকাশিত:রবিবার, ২৬ সেপ্টে ২০২১ ১১:০৯

রুহুল ইসলাম মিঠু:-  প্রকৃতির ইচ্ছায় বিভিন্ন সময়ে রূপ অপরূপে পরিণত হয় এদেশের বৈচিত্র্য। আগেকার দিনে দেশের মানুষজন প্রকৃতির প্রতি এত বেশি প্রেমিক ছিলেন না। দেশ বিশ্বময় জগতে আধুনিকতার সাজগোজে মানুষ জন যেভাবে সচেতন বিলাসী ছিলেন, ততটা প্রকৃতির সাজে নিজেকে সাজানোর মতো সবাই কমবেশি সচেতন ছিলেন। নতুন প্রজন্ম প্রকৃতির সাথে প্রেম করতে যতটা এগিয়েছে, ততটা প্রকৃতির সেবায় বৃক্ষ লাগানোর মত মন মানসিকতা কয়জনের আছে? তবুও প্রকৃতি তার নিজ ইচ্ছা গুণে দরদী হয়ে মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। সেজন্য প্রকৃতির মহান ¯্রষ্টা, জগতের মালিক ও নিয়ন্ত্রক মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জানাই।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সিলেট মহানগরীর টিলাগড়-শাপলাবাগের পূর্বদিকে গ্রীনল্যান্ড হাউজিং প্রকল্প এলাকায় বন্ধুদের দাওয়াতক্রমে আমরা ৯জন সেখানে গিয়ে বেড়াই। বেড়ানোর উদ্দেশ্য ছিল সেখানে নাকি প্রকৃতি সাজিয়েছে কাশফুলের কাশবন বাগান। স্থানীয় ভ্রমণপিপাসুরা উক্ত স্থানের নাম রেখেছে কাশবন।

ঘন ঘন চিকন চিকন গাছে গাছে সাদা সাদা লম্বা ফুল প্রকৃতিকে সাজিয়ে নজর কেড়েছে মানুষজনের। কাশবন দেখতে কৌতুহলদীপ্ত শত শত মানুষ ওখানে আড্ডা দিচ্ছে। কাশবনের প্রবেশ দ্বারে পৌছে দেখি, সেখানে তরুণ তরুণী, যুবক-যুবতীরা এমনকি ছোট শিশু পর্যন্ত কাশফুলের সাথে মিশে গিয়ে আড্ডা দিয়ে যে যার মত সেলফোন দিয়ে সেলফি তোলছে। সময়ের ব্যবধানে বিকাল বেলা সেখানে ভিড় লেগেই ছিল। আমরা তাদের ফাকে ফাকে আড্ডা দিয়ে সেলফোনে গ্রুপ ছবি, একক ছবি তোলতে থাকি।

মাত্র ৪০ মিনিট কাশবনে অবস্থান করতেই পবিত্র মাগরিবের আজান শুরু হয়। ২/৩ জন যুবক হঠাৎ করে কাশফুলে ভ্রমণকারীদের ভিড়ে বলতে থাকেন সন্ধ্যা হয়ে গেছে সবাই চলে যান। এ কথা বলার কিছুক্ষণ পরই ৪/৫ জনের একদল যুবক বিশৃঙ্খলভাবে কাশবনের কাশফুলে হঠাৎ আগুন ধরিয়ে দেয়। আমরা সেদিকে তাকিয়ে দেখি আগুন ধরে গেছে, কিছু বাকী রয়েছে দাউ দাউ করে জ্বলার।
আমি ও তারেক আগুন লাগিয়ে দেয়াকারীদের প্রশ্ন ছুড়ে মারলাম, কেন আপনারা আগুন ধরালেন?

উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা আমাদের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে থাকে। আমি ও তারেক রহমান তাদের কাছে গিয়ে বলতে থাকি, এর মধ্যে তাদের একজন আমাকে চিনে ফেললো। আমি তাদের একজনকে প্রশ্ন করলাম, ওখানে আগুন দিচ্ছো কেন? সে জানালো এখানে যেসব লোকজন এসে বেড়ায়, সেজন্য তাদের ডিসটাব হয়। এ কারণে উচ্ছৃঙ্খলদের ভাবনা কাশফুল বাগানে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলে কাশবন জ্বলে যাবে। তাতে কেউ আর এখানে আসবে না।
আমাদের সাথে ভ্রমণকারীদের মধ্যে ছিলেন এমসি কলেজের মেধাবী ছাত্র তারেক রহমান, হৃদয়, শিপার, কামরুল, রেজাউল, লাবিব, ইফজাল, পারভেজ, আনন প্রমুখ।

আমরা কাশফুল বাগানের ভেতরে প্রবেশ করেই বেড়াতে আর ছবি তোলতে গিয়ে প্রচ- গরমে ঘেমে যাই। আমার শার্টটি পুরো ভিজে যায়। কত সময় পর তারেক বলল, তারও শার্ট ভিজে গেছে গরমে। আমরা বেশিক্ষণ কাশবনের চতুর্দিকে বেড়াতে সময় পাইনি।

কাশবনের দু’ধারে ছোট ছোট দুটি খাল দেখা গেছে। খালগুলোতে খুব বেশি পানি নেই। কাশবনের দু’শত গজ অদূরে, দক্ষিণ দিকে একটি বিল-ঝিল দেখা গেছে। এর মধ্যে এক একর জায়গা জুড়ে শুধু ঘন কাশফুলে ভরা কাশবন বাগান। প্রকৃতি যেন ছেয়ে গেছে এই বাগানে। চোখ জুড়ালে দেখা যায় এই কাশবনের প্রকৃতি কত সুন্দর।

কাশবনের এই খবর খুব দ্রুত জানাজানি হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই আছে। প্রতি শুক্রবারে কাশফুল বাগানে প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

গ্রীনল্যান্ড হাউজিং প্রকল্প এলাকায় প্রায় ১২/১৪ বছর আগে পরিকল্পিত আবসন এলাকা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের প্লট নিয়ে লেনদেনে জড়িয়ে পড়ায় আদালত পর্যন্ত মামলা মোকদ্দমায় নিমজ্জিত থাকে প্রকল্পটি। এরপর থেকে হাউজিং প্রকল্প এলাকাটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। আর প্রকল্পের পূর্ব দিকে এই কাশবনের কাশফুল বাগানের অবস্থান। ওই বাগন থেকে যদি তাক করে উত্তর আর পূর্ব দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ইসলামপুর আর মেজর টিলা অন্য দিকে ভাটপাড়া। তারেক বল্ল, প্রকৃতি নিষ্ঠুর না, মানুষের নিষ্ঠুর আচরণের কারণে প্রকৃতিতে নেমে এসেছে পরিবেশ দুষণ। সমাজের মানুষ একটু সচেতন হলে গ্রীন হাউজ এফেক্ট মাত্রার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ধনী দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হলে গ্রীন হাউজ কার্বন নিঃস্বরণ মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে প্রকৃতির বিরুপ প্রভাব থেকে বাঁচা যাবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ