১৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২রা অক্টোবর, ২০২৩ ইং
প্রকাশিত:শুক্রবার, ১৯ মার্চ ২০২১ ০৬:০৩
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:- সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার শিকার সংখ্যালঘুদের গ্রাম পরিদর্শন করেছেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান ও সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমদ। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নোয়াগাঁও গ্রামে পৌঁছে তারা ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন।
গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ৯০টি পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে চাল, নগদ টাকা ও ঢেউটিন প্রদান করা হয়। পরিদর্শন শেষে নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি।
মতবিনিময় সভায় ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ এ দেশে থাকতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনার সার্বক্ষণিকভাবে আপনাদের খোঁজখবর রাখছেন। আপনাদের পাশে আমরা সার্বক্ষণিক আছি। কোনো অবস্থাতেই আপনাদের শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। সরকার তার সমস্ত শক্তি নিয়ে সমস্ত ফোর্স নিয়ে আপনাদের পাশে আছে। আপনারা নিশ্চিন্তে এই স্বাধীন দেশে নিজ বাড়িতে নির্ভয়ে থাকবেন।
মশিউর রহমান বলেন, সন্ত্রাসমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারা জীবন কষ্ট করেছেন। এজন্য জীবন দিয়ে গেছেন। আমরা সেই বাংলায় কোনো সন্ত্রাস দেখতে চাই না। সরকার রাজনৈতিকভাবে, প্রশাসনিকভাবে আপনাদের পাশে থাকবে।
হামলায় নেতৃত্বদানকারী শহিদুল ইসলাম ওরফে স্বাধীন মেম্বারের প্রসঙ্গ এনে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ইতোমধ্যে দুটি মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এজাহারভুক্ত দুইজনসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
যে কোনো মূল্যে আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখবো উল্লেখ করে ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, পুলিশ প্রশাসন বারবার প্রমাণ করেছে দেশে জঙ্গি সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই, এখানেও থাকবে না। এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়েরের পরপরই ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং একে একে সবাইকে গ্রেফতার করা হবে। আপনাদের নিরাপত্তায় র্যা ব ও পুলিশের দুটি ক্যাম্প আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এলাকা শঙ্কামুক্ত হবে না আমরা পাশে থাকব।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলে, মৌলবাদী প্রেতাত্মাদের স্থান এ দেশে হবে না, কোনো মৌলবাদী শক্তি আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিভাগীয় কমিশনারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখানে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিকভাবে আপনাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। সুনামগঞ্জে অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আবদুস সামাদ আজাদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বরুণ রায়সহ শাহ আব্দুল করিম, হাসন রাজা, রাধারমণের এলাকায় এমন সাম্প্রদায়িক ঘটনা বরদাস্ত করা যায় না। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন, অপরাধী যেই হোক তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার অনুকূল চন্দ্র তালুকদার ডাল্টন, শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল্লা আল মাহমুদ চৌধুরী আল–আমিন, দিরাই পৌর মেয়র বিশ্বজিৎ রায়, দিরাই উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রিপা সিনহা, শাল্লার ইউএনও আল মুক্তাদির, দিরাইয়ের ইউএনও মাহমুদুর রহমান মামুন, শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হক, দিরাই থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ দাস বকুল, দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সিরাজ উদ দৌলা, অ্যাডভোকেট সোহেল আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক অভিরাম তালুকদার।
এরপর ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭টি পরিবারের মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা এবং ৫৩টি পরিবারের মধ্যে তিন হাজার টাকা করে মোট ৯০টি পরিবারের মধ্যে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত সাতটি মন্দিরে সাত টন চাল, ৩২টি পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহ মেরামতের জন্য এক বান্ডিল করে ঢেউটিনসহ নগদ তিন হাজার টাকা করে দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা ব্যক্ত করেন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের নেতা আল্লামা মামুনুল হককে কটাক্ষ করে স্ট্যাটাস দেয় শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত গোপেশ দাসের ছেলে ঝুমন দাস আপন। এর জের ধরে গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দিরাই-শাল্লা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের লোক বিক্ষোভ মিছিল করে হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা ও লুটপাট চালায়। এতে গ্রামের ৯০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ হামলার ঘটনায় দুটি মামলায় এজাহারভুক্ত দুইজনসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
Helpline - +88 01719305766